images

সারাদেশ

চট্টগ্রামে গাইডলাইন অনুযায়ী হচ্ছে না করোনা টেস্ট!

২১ জুন ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম

  • সন্দেহভাজন রোগীদের দেওয়া হচ্ছে শুধু আরডিটি
  • ক্রমাগত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
  • মৃত্যু হয়েছে একজনের
  • নগরবাসীর মাঝে সচেতনতার ঘাটতি

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না টেস্ট। চলতি মাসের ৪ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। অথচ করোনা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে নেই কোনো সচেতনতা। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। আগের মতোই যেন বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে চলছেন সবাই।

অন্যদিকে, জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী করোনা পরীক্ষা চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালেই ঠিকভাবে করা হচ্ছে না। সন্দেহভাজন রোগীদের মধ্যে সীমিত পরিসরে শুধু আরডিটি (র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট) দেওয়া হচ্ছে। যদিও পর্যাপ্ত কিট মজুত রয়েছে, তবুও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে না, ফলে সঠিকভাবে শনাক্ত হচ্ছে না করোনা রোগী।

শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যেসব রোগী আসেন, তারা নিজেরাই জানান যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে না। অনুসন্ধানে এ তথ্যের সত্যতাও মেলে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে শনিবার ১১৯ জন জ্বর আক্রান্ত রোগী এলে, তাদের মধ্যে মাত্র ১১ জনের আরডিটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১ জনের ফল পজিটিভ আসে। আগের দিন শুক্রবার ২৪৫ জন জ্বর আক্রান্ত রোগী এলেও পরীক্ষা করা হয় মাত্র ৭ জনের। সেখানেও ১ জনের ফল পজিটিভ আসে। বাকি শত শত রোগীর কারো করোনা পরীক্ষা হয়নি। এমনকি আরটি-পিসিআর ল্যাবেও কোনো নমুনা পাঠানো হয়নি।

কালেকশন বুথেও দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কেউ উপস্থিত ছিলেন না। একই অবস্থা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও। সরকারি এই দুটি হাসপাতালে শুধুমাত্র আরডিটি টেস্ট করা হচ্ছে, কোনো নমুনা আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে না।

বুধবারও ২ জনের আরডিটি টেস্ট করা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা শনাক্তে আরডিটি ও আরটি-পিসিআর উভয় পরীক্ষাই করা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসকদের মতে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষা প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল দেয়, কারণ এটি একটি মলিকুলার প্রসেস। অন্যদিকে, আরডিটি দ্রুত ফলাফল দেয়, তবে এতে ভুল ফলাফলের সম্ভাবনা বেশি। অনেক সময় আরডিটিতে নেগেটিভ এলেও, আরটি-পিসিআরে তা পজিটিভ আসে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. হামিদ হাসান বলেন, ‘আমরা যাদের সন্দেহজনক মনে করি, তাদেরই আরডিটি করতে দিচ্ছি। যেসব রোগীর দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাদের আরটি-পিসিআর করা হচ্ছে। এতে ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝা যায়।’

আরও পড়ুন—

তবে নমুনা ল্যাবে না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোগী যদি বুথে না যায়, নমুনা না দেয়, তাহলে তো দায় ডাক্তারের নয়। আসলে করোনা এখন তেমনভাবে ছড়াচ্ছে না বলেই আরটি-পিসিআরের দিকে ততটা ঝুঁকছি না। আমরা চিকিৎসকরা তো বুঝি কে করোনা আক্রান্ত হতে পারে, কে না।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ী রোগীর আরডিটি এবং আরটি-পিসিআর উভয় টেস্ট করাতে হবে। আরডিটিতে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায়, তবে অনেক সময় নেগেটিভ এলেও আরটি-পিসিআরে পজিটিভ আসে। আরটি-পিসিআর হলো একটি মলিকুলার প্রসেস যা ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত সঠিক ফল দেয়।’

তবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি ও জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার করোনা তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট না আসায় আমাদের পরিসংখ্যানে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আমি কঠোর নির্দেশনা দেবো যাতে কেউ তথ্য পাঠাতে অবহেলা না করে।’

শুক্রবার (২০ জুন) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। এর আগে সোমবার (১৬ জুন) একজন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেও মানুষ এখনো সচেতন না। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে, নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতাল প্রস্তুত আছে, কিন্তু আমরা চাই কেউ আক্রান্ত না হোক। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন—

korona-3

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘কোভিড শুরু হওয়ার পর মানুষ সেই কঠিন সময়ের কথা ভুলে গেছে। নিয়ম না মানলে আবারও আগের মতো সংকট তৈরি হতে পারে। এমনকি ফের লকডাউনের পরিস্থিতিও আসতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর দুই বছরে চট্টগ্রামে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫১৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৩৭০ জন। সম্প্রতি নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি