জেলা প্রতিনিধি
২০ জুন ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
লবণাক্ততা সহনশীল, উফশী বোরো ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী আরও তিনটি জাত উদ্ভাবন করল বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।
সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত তিনটি ধানের জাত অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন জাতগুলোর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো ও অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রির মহাপরচিালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
![]()
নতুন উদ্ভাবিত এই তিনটি জাতসহ এখন পর্যন্ত ব্রি সর্বমোট ১২১টি জাত উদ্ভাবন করেছে যার ৮টি হাইব্রিড। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান৭৩ এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪-৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম, যা এর মাতৃসারি ব্রি ধান৭৩ এর থেকে ১-১ দশমিক ৫ টন/হে. বেশি। এ জাতের জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩-১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত এবং ঢলে পড়া প্রতিরোধী। এ ধানের শিষে পুষ্ট দানার সংখ্যা গড়ে ২১০টি, যা ব্রি ধান৭৩ এর থেকে ৮০-৯০টি বেশি। এই প্রস্তাবিত জাতটিতে Gn1a জিনের উপস্থিতির কারণে শিষে দানার (স্পাইকলেটের) সংখ্যা বাড়ে। চাল মাঝারি চিকন, সাদা এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান১১২ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ১২ ডিএস/মি. (৩ সপ্তাহ পর্যন্ত) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। উপরন্তু এ জাতটি অঙ্গজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত লবণাক্ততা সংবেদনশীল সব ধাপে ৮ ডিএস/মি. মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতটির দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জাতটির জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমূখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।
![]()
ব্রি ধান১১৩ জাতটি বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ২৯ এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২-১০৫ সেন্টিমিটার। এ জাতের গাছ শক্ত এবং মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯.৪ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি মাঝারি চিকন, এবং রং সাদা, দেখতে অনেকটা নাইজারশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৮ দশমিক ০ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৪ ভাগ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় এ জাতটি ব্রি ধান৮৮ এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
ব্লাস্ট প্রতিরোধী বোরো মওসুমের দীর্ঘ মেয়াদি জাত ব্রি ধান১১৪।
ব্রি ধান১১৪ বোরো মওসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় এর ফলন হেক্টরে ১০.২৩ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ জাতের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৪৯ দিন, যা বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান৮৯ এর সমান জীবনকাল। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৭.৪ গ্রাম। চালে অ্যামাইলোজের পরমিাণ শতকরা ২৭.০ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭ দশমিক ৭ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ জাতটিতে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী প্রকট জিন Pi9 বিদ্যমান এবং আর্টিফিশিয়াল ইনোকুলেশনে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
প্রতিনিধি/এসএস