১৮ জুন ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে সেই চিরচেনা জলাবদ্ধতা। তাতে ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরীর কর্মজীবী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে বিস্তীর্ণ নয়, কিছু এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে এই জলাবদ্ধতা। যেখানে এখনও চলছে চউকের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা। তিনি বলেন, নগরীর কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিকের সামনে হাটু থেকে কোমর পানির মতো পানি জমে গিয়েছিল। জিইসি মোড় থেকে ওয়াসার দিকে যাওয়ার সময় যে থলি (নিচু) জায়গাটা আছে, সেখানে পানি জমে যায়।
তিনি আরও জানান, চউকের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় নগরীর কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ ও মুরাদপুর এলাকায় অবস্থিত হিজড়া খালের খনন ও সংস্কার কাজ চলছে। খালটির অবস্থা নাজুক। ফলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এসব এলাকার সড়কগুলো হাটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে গেছে।
অন্যদিকে আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্টের ভিতরে জমে থাকা আবর্জনা ও ময়লা। বর্তমানে ওই খালটির পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার রাতভর থেমে থেমে চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার (১৮ জুন) ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এরপর কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এতে চট্টগ্রামে জলজট সৃষ্টি হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, বুধবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
এ হিসেবে চট্টগ্রাম জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সকালে নগরীর কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, চকবাজারের একাংশ, আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার একাংশ, হাজীপাড়া এলাকার মূল সড়ক ও অলিগলি পানিতে ডুবে যায়।

কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জে নিচতলার বাসা ও দোকানপাটের ভেতরেও পানি ঢুকেছে। এসব এলাকায় সড়ক ও অলিগলিতে কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামার পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পানি নেমে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কিছু সড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, টেম্পু, রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল একেবারে কমে যায়।
নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সাইফুর রহমান জানান, বৃষ্টি কম হোক বা বেশি, কাতালগঞ্জে নিয়মিত পানি ওঠে। শহরের অনেক জায়গায় এখন জলাবদ্ধতা হয় না, কিন্তু কাতালগঞ্জে বর্ষায় পানি জমে যাওয়া একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় পানির স্তর চোখে পড়ে।
আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার এক বেসরকারি কর্মকর্তা সোহেল চৌধুরী বলেন, অতি ভারী বৃষ্টির কারণে পানি জমে গেছে, যা খুবই স্পষ্ট। গতকাল মঙ্গলবারও এই এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছিল, যদিও শহরের অন্যত্র তখন এমন পরিস্থিতি ছিল না। বৃষ্টির সময় এই এলাকায় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে।
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার ফলে চট্টগ্রামসহ আট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে, যা অন্তত তিনদিন অব্যাহত থাকবে। এর ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
উল্লেখ্য, নগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বিভিন্ন বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সিডিএর মেগা প্রকল্পসহ মোট চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, যার জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে ৩৬টি খালের খনন ও সংস্কার, যার জন্য আলাদা বাজেট হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ আগামী বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আর ছয়টি খালের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন। বাকী পাঁচটি খালের কাজ এখনও ৯০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি