জেলা প্রতিনিধি
১৬ জুন ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
শিশুটির নাম গোপাল সাওতাল। বয়স সাড়ে তিন বছর। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই বয়সে অন্য স্বাভাবিক শিশুরা যেখানে ছোট ছোট পায়ে সারাঘরে দৌড়ে বেড়ায়, সেখানে ঘরের ভেতর মাটির গর্তের মধ্যে বুক পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাখা হয় তাকে। ক্ষুধার সময় কান্নাকাটি করলে সেখানেই তাকে খাওয়ান মা।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মুরইছড়া চা বাগানের বাসিন্দা অনিল সাওতাল ও গৃহিনী সনচড়ি সাওতালের একমাত্র সন্তান গোপাল সাঁওতাল।
![]()
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাটির গর্তের মধ্যে থাকা গোপালের ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
গোপালের স্বজনেরা জানান, শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। বসিয়ে রাখলে সে ভাঁজ হয়ে শুয়ে থাকে। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়ি সাঁওতাল ঘরের মেঝেতে ছোট একটা গোলাকার গর্ত করেছেন। তার মাথা ও হাত দু'টি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। সেই গর্তে গোপালকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন গোপালের দাদি কল্পনা সাঁওতাল। মা সনচড়ি সাঁওতাল ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল চা-বাগানে কাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে সন্তানের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
![]()
গোপালের মা সনচড়ি সাঁওতাল জানান, জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সম্প্রতি শিশুটির চিকিৎসার জন্য সিলেটের খাদিমনগরের একটি সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। এটাই তার উন্নতির একমাত্র পথ। কিন্তু এ ধরনের থেরাপি নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের।
তিনি বলেন, সন্তানের কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই তাকে শান্ত রাখার জন্য এই গর্তটি করেছি। সেখানে ঢুকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। স্বামী চা-বাগানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। সামর্থ্য থাকলে যন্ত্রপাতি কিনে আনতাম শিশুর জন্য। শুনেছি এইরকম প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য নাকি অনেক যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, সবার সহযোগিতায় আমার শিশু ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে চাই।
![]()
বাবা অনিল সাঁওতাল জানান, একমাত্র সন্তানটি যেন একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, নিজের মতো করে হাঁটতে পারে, এটাই আমাদের চাওয়া।
শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, শিশুটিকে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। শিশুটির এই মুহূর্তে প্রয়োজন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য পরিবারটির নেই। শিশুটিকে সহযোগিতা করা খুবই প্রয়োজন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারের প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে, সেটা কারও কাম্য হতে পারে না।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, শিশুটির প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা খুব শিগগির করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস