জেলা প্রতিনিধি
০৬ জুন ২০২৫, ১০:১৬ এএম
বিগত ৯৭ বছর ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদরা দরবার শরীফের পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) এর অনুসারীরা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে প্রায় অর্ধশত গ্রামে আগাম ঈদ উদযাপন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দরবার শরীফসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে আজ উদযাপন হচ্ছে ঈদুল আজহা।
শুক্রবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দরবার শরীফের দুটি ঈদগাঁয়ে মুসল্লীরা আসতে শুরু করেন। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী লোকজন নতুন জামাকাপড় পরিধান করে এবং সুগন্ধী মেখে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন।
ঈদের নামাজের প্রথম জামাত সাদরা দরবার শরীফ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।
এরপর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সাদরা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা মাঠে সকাল ৮টায়। এই জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।
দুটি ঈদ জামাতের নামাজ শেষে মোনাজাতে ইমামগণ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিমদের শান্তি ও সুরক্ষা এবং দেশের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।
নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লীরা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়, কোলাকুলি ও করমর্দন করেন। কিছু সময় পর দরবার শরীফ ও আশপাশের এলাকায় আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করেন লোকজন।
গোপালগঞ্জ থেকে প্রথমবারের মতো চাঁদপুর দরবার শরীফে আগাম ঈদ করতে আসা মুসল্লি সাইফ বলেন, ‘আমি সাদরা দরবার শরীফে এই প্রথম এই ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এখানে এসে ভালো লাগছে। সামনেও ঈদ করতে আসার চেষ্টা করব।’
ঈদ জামাতে আসা স্থানীয় যুবক ইমাম হোসেন বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ছিল সারা বিশ্বের জন্য আরাফার দিন। যা বাংলাদেশের জন্য বা অন্য কোনো দেশের জন্য আলাদা নয়। যেমন কেয়ামত সারা দুনিয়ায় একদিনেই হবে। সেই হিসেবে গতকাল ছিল আরাফার দিন, আর আজ ঈদুল আজহার দিন। সেই কারণে আমরা ঈদ পালন করছি।’
এদিকে, পাশের উপজেলা ফরিদগঞ্জের টোর মুন্সীরহাট, সাচনমেঘ ও উভরামপুর গ্রামে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও মতলব উত্তর উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে অনুসারীদের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
তবে এসব এলাকায় সরকার ঘোষিত নির্ধারিত তারিখে ঈদ উদযাপন করেন এমন মুসল্লিদের সংখ্যাও কম নয়। তারা রীতিমতো শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানি করবেন।
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, ১৯২৮ সাল থেকে সাদরা দরবার শরীফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার উদযাপনের প্রথা চালু করেন। এই রীতি তাঁর অনুসারী মুসল্লিরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সঙ্গে পালন করে আসছেন। যার ফলে এখন সারাদেশেই এই পীরের অনুসারী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চাঁদপুর জেলায় যেসব গ্রামে আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন হবে সেগুলো হলো: হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদরা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর; মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানি; এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।
প্রতিনিধি/একেবি