জেলা প্রতিনিধি
০৫ জুন ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
প্রিয়জনদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে মানুষ। ফলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তিতে ঘাট পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ ও যানবাহন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি ও লঞ্চে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। যাত্রীরা দৌলতদিয়া ঘাটে নেমে বাস, ত্রি-হুইলার, মাহিন্দ্রা ও মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন।
এদিকে, ঘাটে যানজট না থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো সরাসরি ফেরিতে করে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঘাট এলাকায় জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকার মিরপুরে একটি দোকানে কর্মরত রিপন মণ্ডল বলেন, "ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি ফরিদপুরের মধুখালীতে। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান আছেন। ঘাটে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যেতে পারছি—এটা খুবই আনন্দের বিষয়।"
ঢাকা থেকে আসা কুষ্টিয়াগামী মোটরসাইকেলচালক মাহফুজ মিয়া বলেন, "সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সাড়ে ৮টার মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে গেছি। পথে কোনো যানজট বা ভোগান্তি ছিল না। ঘাটে এসেই সরাসরি ফেরিতে উঠে দৌলতদিয়ায় পৌঁছেছি।"
বাসযাত্রী মফিজুল ইসলাম বলেন, "পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই রুটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ অনেকটাই কমে গেছে। তাই এখন এ পথে যাতায়াতে কোনো সমস্যা হয় না।"
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. সালাহউদ্দিন বলেন, "সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে কোনো যানজট বা ভোগান্তি নেই। এ নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি দিয়ে পারাপার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।"
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান বলেন, "এ বছর ঈদে লম্বা ছুটি রয়েছে। যদিও পদ্মা সেতুর কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কিছুটা কমেছে, তবে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ঘাটে আসা পশুবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করানো হচ্ছে, যাতে অপেক্ষা করতে না হয়।"
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার জানান, "ফেরিঘাটে কেউ যাতে হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হয়, সেজন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।"
পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, "দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। চুরি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদক বিক্রির অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "ঈদের দিন, ঈদের আগের তিন দিন এবং ঈদের পর সাত দিন নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যার পর নদীপথে পশুবাহী ট্রলার চলবে না। প্রত্যেকটি পশুবাহী ট্রলারে গন্তব্যস্থলের নাম লিখে রাখতে হবে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনও বন্ধ থাকবে।"
সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নির্বিঘ্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রতিনিধি/একেবি