images

সারাদেশ

দৌলতদিয়ায় ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন, অগ্রাধিকার পাচ্ছে পশুবাহী ট্রাক

জেলা প্রতিনিধি

০৩ জুন ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে নির্বিঘ্নে পারাপার হচ্ছে সব ধরনের যানবাহন। গাড়ির চাপ বা ভোগান্তি তেমন নেই। তবে গাড়ি পারাপারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে পশুবোঝাই ট্রাক।  

ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, এমনিতে দিনে এই ঘাট দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি পারাপার হয়। কিন্তু ঈদের সময় সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যে কারণে ভোগান্তি কমাতে ঈদের তিন দিন আগে ও পরে মোট ছয় দিন এই নৌপথ দিয়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক পরাপার করা হবে না। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে উঠছে।

সরেজমিনে ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যানবাহন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে ঘাটে কোনো গাড়িকেই খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

মাগুরা থে‌কে ঢাকাগা‌মী একটি বাসের যাত্রী কামাল মোল্লা ব‌লেন, ‘আগের তুলনায় এখন দৌলতদিয়া ঘাটে তুলনামূলক যানজট কম। পদ্মা সেতু চালুর পর থে‌কে এই নৌপথে ভোগা‌ন্তি নেই বল‌লেই চ‌লে। তবে ঈদের সময় যাত্রীরা এই পথে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন। এদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।’

D1

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী বাস যাত্রী আমজাদ মোল্লা বলেন, ‘আমি নিয়‌মিত এই নৌপথ ব‌্যবহার করি। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই ঘাটে যানজট কমে গেছে। এখন ফেরি অপেক্ষা করে গাড়ির জন্য।’

য‌শোর থে‌কে ট্রাক নিয়ে আসা চালক আব্দুল খা‌লেক ব‌লেন, ‘আমরা সবসময় চাই ফে‌রিঘাট ও মহাসড়ক যেন ক্লিয়ার থা‌কে। এখন সেই ভোগা‌ন্তি নেই এই ফে‌রি ঘা‌টে। পদ্মা সেতু চালুর আগে তো সাত দিনও ব‌সে থে‌কে‌ছি পা‌রের অপেক্ষায়।’

ঝিনাইদহ থে‌কে আসা ট্রাক চালক বিল্লাল মোল্লা ব‌লেন, ‘এবারও ঘাট ক্লিয়ার থাক‌বে। কারণ, ঈদের আগে তিন দিন পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ থাক‌বে। আর বে‌শিরভাগ গা‌ড়ি তো পদ্মা সেতু হ‌য়ে যায়। যে কার‌ণে যানজট হ‌বে না।’

এদিকে ঘাটে পশুবাহী ট্রাকের চাপ বাড়লেও দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তি ছাড়াই সরাসরি ফেরির নাগাল পাচ্ছে যানবাহনগুলো। এতে খুশি গরুর মালিক ও বেপারীসহ গাড়ির চালকরা।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই ঘাট ব্যবহার করে পদ্মা নদী পারাপার হয়েছে ১ হাজার ৬৩৮টি যানবাহন। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ২২১টি, পণ্যবাহী ট্রাক ৬৫৯টি, ছোট গাড়ি ৭১৮টি ও ১২০টি মোটর সাইকেল।

D2

কুষ্টিয়া থেকে রাজধানী ঢাকার গাবতলী হাটে ১৫টি গরু নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী কফিল শেখ। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে ঘাটে কোনো দুর্ভোগ নেই। এ বছরও কোনো সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়নি। সরাসরি ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে পারছি।’

রাজবাড়ী থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন রহিম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার আগে দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এই তীব্র গরমে অনেক গরু গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন ফেরিতে চাপ কম পড়ায় কোনো ধরণের দুর্ভোগ ছাড়াই সরাসরি দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে পেরেছি।’

কয়েকজন ব্যাপারী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ২০টি গরু নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে যাচ্ছি। দৌলতদিয়ার রাস্তায় কোনো যানজট নেই। সরাসরি ট্রাকে ফেরি ঘাটে এসেছি। আগে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে গরমে গরু ও আমরা অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এছাড়া সময়মতো গরু হাটে নিতে না পারায় লোকসান হয়েছে। এবার সঠিক সময়ে ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো।’

D3

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ায় বাতাস বইছে, যে কারণে ফেরিগুলো নদী পারাপার হতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় ১২টি ফেরী দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।’

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, ‘এ বছর ঈদে লম্বা ছুটি। যদিও পদ্মা সেতু হওয়াতে দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমেছে। তারপরও আমরা ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘাটে আসা পশুবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। যেন ঘাটে এসে অপেক্ষা করতে না হয়, সেজন্য সকল প্রস্তুতি আছে।’

অন্যদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার। তিনি ব‌লেন, ‘ফেরি ঘাটে এসে কেউ যাতে হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হয়, সেজন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।’

D4

পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী বন্দর। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। চুরি, ছিনতাই, ফেরিতে জুয়া ও মাদক বিক্রির অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে সেটি ভালো পদক্ষেপ। সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে ইনশাআল্লাহ। মানুষ দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট দিয়ে শান্তিতে পারাপার হতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের দিনসহ ঈদের আগের তিন দিন ও ঈদের পর আরও সাত দিন নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যায় নদী পথে পশুবাহী ট্রলার থাকবে না। প্রত্যেকটি পশুবাহী ট্রলারে গন্তব্য স্থানের নাম লেখা থাকতে হবে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনও বন্ধ থাকবে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘ঈদুল আযহা উপলক্ষে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। থানা পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ ও ডিবি পুলিশসহ একাধিক টিম রয়েছে। এছাড়া নৌপুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা পুলিশ সর্বদা মাঠে থাকবে।’

বর্তমানে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১৭টি ফেরির পাশাপাশি ২০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। তিনটি ঘাটও প্রস্তুত। প্রয়োজনে আরও একটি ঘাট বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বিআইড‌ব্লিউটিসির দৌলত‌দিয়া ঘাট শাখার ব‌্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন।

এএইচ