জেলা প্রতিনিধি
০১ জুন ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী নদীর পানি হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে। রবিবার সকাল থেকে পানির প্রবাহ বাড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরামে নদীর পানি বিপদসীমার ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই আতঙ্ক নিয়েই নিজ বাড়িতে রাত যাপন করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রাতের মধ্যেই পানির চাপ কমে আসতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
গত বছর মুহুরী নদীর প্রবল স্রোতে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। প্রাণহানি ঘটে অন্তত ২৯ জনের, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল হাজার কোটি টাকারও বেশি।
পানির পরিমাণ বেড়েছে চার ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে টানা ভারী বর্ষণের ফলে মুহুরী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
রবিবার সকাল ৯টায় নদীর পানি ছিল বিপদসীমার ৮.৯৫ সেন্টিমিটার নিচে, দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০.৩৯ সেন্টিমিটার, এবং দুপুর ১টায় হয় ১০.৯৩ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ চার ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ২ সেন্টিমিটার।
বাঁধে ঝুঁকি, স্থানীয়দের উদ্যোগে সাময়িক ব্যবস্থা
পরশুরামের ধনিকুন্ডা ও নোয়াপুর এলাকায় বিকেলের দিকে নদী রক্ষা বাঁধের দুটি স্থানে ফাটল ও চাপের ঝুঁকি দেখা দেয়। স্থানীয়রা নিজেরা মাটিভর্তি বালুর ব্যাগ দিয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তারা এমন ঘটনার বিষয়ে অবহিত নয়।
‘বন্যার আশঙ্কা নেই, তবু সতর্ক থাকুন”
পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টায় নদীর পানি বিপদসীমার ১১.৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আমাদের ধারণা, রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুহুরী নদীর বিপদসীমা ১২.৫ সেন্টিমিটার। এখন পর্যন্ত পানি ওই সীমার নিচে রয়েছে। পানির প্রবাহ এ অবস্থায় থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।’
জেলা প্রশাসনের আশ্বাস
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোথাও বাঁধে ফাটল বা ঝুঁকি দেখা দেয়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন একযোগে কাজ করবে।’
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার ও প্রয়োজন হলে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি