নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ জুন ২০২২, ১২:৫৪ এএম
ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। এই দুই জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সেখানকার প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় পুরো সিলেট শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎহীন এলাকায় মোমবাতি ও কেরোসিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় বেড়ে গেছে দামও।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, বন্যায় পানি বেড়ে বাড়িঘরের মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নগরের উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা ও কোম্পানীগঞ্জ বিদ্যুতের সাবস্টেশনে পানি ওঠায় এই দুই উপজেলা বৃহস্পতিবার থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, কানাইঘাট উপজেলারও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, সিলেট বিভাগের চার জেলায় পিডিবির প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে সিলেটের এক লাখ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক এখন বিদ্যুৎহীন।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জেনারেল ম্যানেজার দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, সমিতির সিলেট-১-এর অধীনে থাকা ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার রায় জানিয়েছেন, সিলেট-২-এর অধীনে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, ‘বন্যার অবনতি হওয়ায় অনেক স্থানেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না।’
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার থেকে পানি উঠতে শুরু করে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে। শুক্রবার পানি বেড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এই উপকেন্দ্র থেকে পুরো সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢোকার খবর পেয়ে শুক্রবার ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বিউবো কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সাথে আলোচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চার পাশে বাঁধ দিয়ে সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেন। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষার কাজে নামে সেনাবাহিনী। বালু ও মাটিভর্তি বস্তা দিয়ে পানি আটকানো ও সেচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির জানিয়েছেন, কুমারগাঁও থেকে বিভিন্ন সাবস্টেশনের মাধ্যমে পুরো সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। এতে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সেনাবাহিনী ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আবদুল কাদির আরো জানান, বর্তমানে বরইকান্দিস্থ উপকেন্দ্রটিতে পানি উঠে পড়ায় পুরো দক্ষিণ সুরমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নগরীর উপশহর উপকেন্দ্রে পানি ওঠায় ৩টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে সিলেট নগরীর প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জে বিদ্যুতের কারণে নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমত কাজ করছে না মোবাইল ফোনও। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্যার্তরা কথা বলতে পারছেন না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না। সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ বলে জানা গেছে।
এসএএস/আরএসও