images

সারাদেশ

চট্টগ্রামের কোরবানির হাটে ভারত থেকে এলো মরুভূমির উট

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ মে ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক কোরবানির পশুর হাটে আলোড়ন তুলেছে মরুভূমির তিনটি উট। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারতের রাজস্থানের ফিরোজ-মামুন ডেইরি ফার্ম থেকে আনা হয়েছে এই মরুভূমির জাহাজ খ্যাত প্রাণীগুলো।

১২ থেকে ১৫ মণ ওজনের উটগুলোর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে ক্রেতারা শুধু দেখতে আসছেন, দামাদামিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বেশিরভাগই সেলফি, ভিডিও বা ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন—এমনটাই জানালেন ফিরোজ-মামুন ডেইরি ফার্মের প্রতিনিধি গাজী সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘ফিরোজ-মামুন ডেইরি ফার্ম থেকে ট্রাকে করে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) উটগুলো মইজ্জারটেক হাটে আনা হয়েছে। এরপর থেকেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, শিশুরা উটের চারপাশে হৈ-চৈ করছে।’

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে ঢাকার একটি হাট থেকে উটগুলো কেনা হয়। এরপর ফার্মে লালন-পালন করে এবার কোরবানির জন্য চট্টগ্রামের শৌখিন ক্রেতাদের লক্ষ্য করে হাটে আনা হয়েছে।

উট বিক্রেতা মো. মন্টু হোসেন বলেন, ‘আমরা ২৬টি গরু ও ৬টি মহিষ এনেছি। সাথে এসেছে তিনটি উট, বেনাপোল হয়ে এসেছে, উৎস রাজস্থান, ভারত। দাম চাচ্ছি ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এখন পর্যন্ত দেখা বেশি, কিনতে আগ্রহী ক্রেতা কম।’

হাটে আসা ক্রেতা এনামুল হক বলেন, ‘প্রতিবার গরু বা ছাগল কিনি। এবার শুনলাম উট এসেছে, তাই দেখতে এলাম। দাম বেশি, আমার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তবে যারা শৌখিন ও আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাদের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।’

চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদ হাসান বলেন, ‘আমি শুধু ছবি তুলতে এসেছি। চট্টগ্রামে সাধারণত উট দেখা যায় না। এত কাছ থেকে উট দেখা আর সেলফি তোলা—বেশ মজার লেগেছে। তবে দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। অনেকে আসলে কৌতূহলবশত দেখতে আসে, কেনার মতো প্রস্তুতি খুব কম মানুষেরই থাকে।’

মইজ্জারটেক হাটের ইজারাদার জসিম উদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘চট্টগ্রামের অন্যতম বড় হাট এটি। প্রতিবছর এখান থেকে বিপুল পরিমাণ পশু বিক্রি হয়। এবার উট আসায় হাটের আকর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে।’

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘চট্টগ্রামের অন্যান্য হাট এখনো তেমন জমেনি। তবে মইজ্জারটেক হাটে ক্রেতা-দর্শনার্থীর আনাগোনা বেশি। হাটে লেনদেন নিরাপদ রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে উট পালন একটি পুরোনো ঐতিহ্য। এই প্রাণীটি শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে সক্ষম। শুধু বাহ্যিক আকর্ষণ নয়, উটের মাংসও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, কম ফ্যাট ও কোলেস্টেরল। আয়রন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এই মাংস অনেক দেশের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

ctg-camel-33

ধর্মপ্রাণ আলেমদের মতে, ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে উটের কদর মুসলিম সমাজে বরাবরই রয়েছে। নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবাহী এই প্রাণী কোরবানির সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এক ভিন্ন আবেগ ছড়িয়ে দেয়। তাই ঈদের আগে মইজ্জারটেক হাটে এই উটগুলো যেন কোরবানির হাটে এক নতুন প্রাণশক্তি এনে দিয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি