৩০ মে ২০২৫, ০৬:৩২ এএম
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যশোরের আলোচিত ষাঁড় ‘বাংলার বস-৫’। কালো রঙের ফ্রিজিয়ান জাতের এই বিশাল ষাঁড়টি ইতিমধ্যে যশোরজুড়ে সাড়া ফেলেছে।
ষাঁড়টির উচ্চতা প্রায় ৬৫ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ৯৬ ইঞ্চির মতো। ওজন ৩০ মণ। দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হুরগাতী গ্রামের খামারি আসমত আলী গাইন এই ষাঁড়টি লালন-পালন করেছেন।
আসমত আলীর খামার থেকে এর আগেও ঢাকার গাবতলী হাটে গেছে অনেক বড় ষাঁড়। গত বছর ‘বাংলার বস-৪’ নামের একটি ষাঁড় তিনি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। সেটি কিনে নেয় টাঙ্গাইলের লাবিব গ্রুপ। এবার তিনি ঈদের বাজারের জন্য প্রস্তুত করেছেন ছয়টি ষাঁড়। প্রতিটি ষাঁড়ই বিশাল আকৃতির।
গরু পালনই এখন আসমত আলীর জীবিকার প্রধান উৎস। কখনও তিনি রিকশা চালিয়েছেন, কখনও বাদাম বিক্রি করেছেন। তবে ছোটবেলা থেকেই গরুর প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। সেই ভালোবাসা এখন তাকে গরুর খামারের সফল উদ্যোক্তা বানিয়েছে।
মাত্র দুটি গরু দিয়ে শুরু হয়েছিল তার খামারের যাত্রা। এখন খামারে গরুর সংখ্যা কখনও ৪৫, কখনও ৬০ ছাড়ায়। তিনটি শেডে চলছে গরু প্রতিপালনের কাজ। একসময় যিনি এক শতক জমির মালিক ছিলেন, এখন তার জমির পরিমাণ ১৭১ শতকে পৌঁছেছে।
২০০৪ সালে অর্থকষ্টে পড়ে গরু পালনের কাজে হাত দেন আসমত আলী। কিন্তু শুরুর দিকে নিজের লাভ খুব বেশি ছিল না। পুঁজি অন্যদের হওয়ায় বেশিরভাগ লাভ চলে যেতো তাদের হাতেই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান এবং প্রায় দুই বছর রিকশা চালিয়ে জীবিকা চালান। বাবার মৃত্যুর পর চাচাদের উৎসাহে আবার ফিরে আসেন গ্রামে। সেখান থেকেই নতুন করে শুরু করেন গরু পালন।
২০০৮ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি খামারের পেছনে সময় দিতে শুরু করেন। দুধ বিক্রির পাশাপাশি গরু বড় করে কোরবানির বাজারে তোলা শুরু করেন। এখন তার খামারে আছে ষাঁড়, গাভী ও বাছুর মিলে প্রায় ২৫টি গরু।
আসমত আলীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম গরু পালনে পাশে আছেন শুরু থেকেই। গরুর গোয়াল পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে প্রতিদিন খাবার তৈরি ও পরিবেশনার দায়িত্বও তিনিই সামলান। ঘাস, বিচালি, খইল, চালের ভাঙা অংশ সিদ্ধ করে, তার সঙ্গে ভুট্টার গুঁড়া ও চিটাগুড় মিশিয়ে তিন বেলা খাবার তৈরি করেন তারা।
আসমত আলী জানান, প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন খাবার বাবদ খরচ হয় প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। গরু অসুস্থ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা দেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তিনি এখন আশপাশের খামারিদেরও পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আগামী ১ জুন গাবতলী হাটে গরুগুলো নিয়ে যাব। আশা করছি এবারও ভালো দামে বিক্রি হবে।
আসমত আলী মনে করেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে ছোট খামারিরাও আরও উন্নত জাতের গরু পালনে সক্ষম হবে। এতে দেশের মাংসের চাহিদাও পূরণ হবে সহজে। তবে আক্ষেপ করে তিনি জানান, আমার খামারে এত ষাঁড় থাকলেও প্রাণিসম্পদ অফিসের কেউ কখনো আসেননি।
এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলাটি অনেক বড়। খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে সেবা দেওয়া আমাদের ছোট টিমের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। জনবল সংকট থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি খামারিদের সহযোগিতা দিতে।
প্রতিনিধি/এইউ