images

সারাদেশ

কক্সবাজারে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত গ্রাম, পর্যটকদের ভোগান্তি

২৯ মে ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে কক্সবাজার উপকূল। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় কুতুবদিয়া, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও কুতুবজোম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে সমুদ্রের পানি।

এতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ও কৃষিজমি।

উপকূলবর্তী এলাকার হাজারো মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছর এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সমস্যা কাটছে না। মাতারবাড়ির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, “জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি ও চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে ভোগান্তি পোহাতেই হবে।”

সেন্টমার্টিন দ্বীপেও সমুদ্রের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। একই সঙ্গে চারদিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, “খাদ্য মজুত শেষের দিকে। বৈরী আবহাওয়ায় স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। মাছ ধরাও বন্ধ রয়েছে।”

এদিকে উত্তাল সাগরের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্বাভাবিক পর্যটন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতের ঝাউবাগান ও জিও ব্যাগে। ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা সাগরে নামতে পারছেন না। নিরাপত্তার জন্য সৈকত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জেট স্কি ও কিটকট চেয়ার। বন্ধ রয়েছে সৈকতপাড়ের ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও।

cox-bazar-3

ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, “গত দুই দিন সাগর মোটামুটি শান্ত ছিল। আজ হঠাৎ করে এমন রূপ নিল যে সাগরে নামা তো দূরের কথা, দাঁড়িয়েও থাকতে ভয় লাগে।” অনেক পর্যটক ঢেউয়ের সৌন্দর্য দূর থেকে উপভোগ করলেও গোসলে নামতে পারছেন না। লাইফ গার্ড কর্মীরা মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করছেন এবং কাউকে পানিতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

উত্তাল সাগরের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেট স্কি, বিচ বাইক, ফটোগ্রাফার ও কিটকট ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। জেট স্কি চালক জাকারিয়া রহমান বলেন, “সাগরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে জেট স্কি তুলে রাখতে হয়েছে। কোনো পর্যটক না থাকায় আয়ও বন্ধ।” কিটকট ব্যবসায়ী গফুর উদ্দিন বলেন, “লাবণী থেকে শৈবাল পর্যন্ত সব কিটকট (ছাতা) সরিয়ে ফেলেছি। এখন শুধু অপেক্ষা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার।”

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, “আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। সাগর থাকবে উত্তাল, জোয়ারের পানিও বেশি থাকবে।”

cox-bazar-2

ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফ গার্ড ও বিচ কর্মীরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রতি বছর এমন দুর্যোগে পড়ে তারা বিপাকে পড়েন। একমাত্র স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণই পারে উপকূলবাসীর এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান দিতে।

প্রতিনিধি/একেবি