জেলা প্রতিনিধি
২৮ মে ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম
সাতক্ষীরা সদরে বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এর আগে, সোমবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টাকালে অন্য শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে সেটা ব্যর্থ হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামির আমির ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, বল্লী ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি ও তদন্ত কমিটির সদস্য সেলিম রেজা মন্টু ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
এদিকে, শিক্ষকের যৌন হয়রানির বিষয়ে তদন্ত কাজে কোনো শিক্ষার্থী যেন হস্তক্ষেপ না করে তাই ভয়ভীতি প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের বেধরক মারপিট করেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ক্লাস চলমান থাকা অবস্থায় শ্রেণি শিক্ষকের উপস্থিতিতে আনোয়ার হোসেন স্যার কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর নানা ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ত্রুটির কথা বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিট করেন। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শ্রেণি শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেন।
বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরর সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, গতকাল শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়ার সময় আকস্মিক কক্ষে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন প্রবেশ করেন। এরপর বেশকিছু শিক্ষার্থীদের বেধরক মারপিট করেন তিনি। ক্লাস চলাকালে একজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে এই কাজটি তিনি খুব খারাপ করেছেন। আমার ক্লাস চলাকালীন সময়ে তিনি কোনোভাবেই এভাবে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মারপিট করতে পারেন না। এটি নিতান্তই আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেছি।
সহকারী শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেহেতু তিনিও তদন্ত কমিটির সদস্য তাই তদন্তের স্বার্থে তিনি আর কোন তথ্য দিতে পারবেন না।
বল্লী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও তদন্ত কমিটির সদস্য সেলিম রেজা মন্টু জানান, শিক্ষক শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। শফিক প্রশ্ন ফাঁস করেছেন সেটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাছাড়া ছাত্রীদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা, স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ সহ যৌন হয়রানির বিষয়ে বেশ কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক আগে থেকে তিনি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন সে বিষয় ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। একটা ছাত্রীকে চুমু খাওয়ার ঘটনায় ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামি আমিরের কাছে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছিলো। শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁস, যৌন হয়রানির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে বল্লী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামির আমির ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান জানান, আজকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে বেশ কিছু সত্যতা মিলেছে। আগামীকাল তদন্ত কার্যক্রম শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে শিক্ষক শফিকের চারিত্রিক ত্রুটির বিষয়টি স্পষ্টতা পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল জানান, গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) সহকারী শিক্ষা অফিসারকে বল্লী মুজিবর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা তদন্ত শেষে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। একই সঙ্গে শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে যথাযথ তথ্য প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/ এজে