images

সারাদেশ

পদত্যাগ করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের সংগঠক

জেলা প্রতিনিধি

২৬ মে ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

“আজ আমি তীব্র ক্ষোভ ও গভীর ঘৃণা নিয়ে, বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির ‘১ নং সংগঠক’ পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করছি। আজ ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত। যেন কেউ না ভাবে আমরা সবাই নীরব ছিলাম।” এমন স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেছেন তৌফিক আহমেদ হৃদয় নামে এক জুলাই যোদ্ধা।

রোববার (২৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগে কয়েকদফায় জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সংবাদ সম্মেলন করে মামলা বাণিজ্য-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সরকারি অফিসে দালালিসহ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তোলে পদত্যাগ করেছেন।

thumbnail_Screenshot_1

পদত্যাগ স্ট্যাটাসে এও উল্লেখ করেছেন তিনি, “যারা আন্দোলনের রক্ত দিয়ে কেনা ব্যানারকে মামলা বাণিজ্য-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সরকারি অফিসে দালালি ও ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি বানিয়েছে, তাদের বিচারও একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। যারা শহীদের রক্তকে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জুলাই চলবে। আমরা জান দেব-জুলাই দেব না।”

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বক্তব্য কি জানতে চাওয়া হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তার ফেসবুকে দেওয়া হুবহু স্ট্যাটাসটি হলো

পদত্যাগপত্র | বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রংপুর জেলা |

“৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী সরকারের পতন আমরা এক ধরনের ‘বিজয়’ ধরে নেই। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয় - এই বিজয় ক্ষণস্থায়ী। তখন থেকেই আন্দোলনের গায়ে রাজনীতির দংশন পড়তে শুরু করে। ৭ আগস্ট প্রথম কমিটি বানানোর প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে 'জুলাই’ হারিয়ে যেতে থাকে। আমি ঐদিন ফেসবুকে লিখি - "আপনারা ছাত্রলীগ বিদায় করে নিজেরাই ছাত্রলীগ হয়ে উইঠেন না।"

thumbnail_Screenshot_2

দুঃখজনকভাবে, বৈছাআ - যেই প্ল্যাটফর্ম আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমসহ হাজার শহীদ ও আহত যোদ্ধার রক্তের ঋণে গড়া - তা দ্রুতই একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাতে বন্দী হয়ে পড়ে। যেসব সদস্য আন্দোলনেই ছিল না, যারা হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে আসে। কোনো এক অজানা জাদুর বলে তারাই রাতারাতি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হয়ে ওঠে । কোনো রকম স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়াই হাস্যকর এই কমিটি প্রথম থেকেই শহরজুড়ে শিক্ষার্থী মহলে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়। বিশেষ করে রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

বৈছাআ-এর নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে সদস্যপদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু এর পরেও কিছু রাজনৈতিক দলের গোপন কর্মী, আওয়ামীপন্থি গুপ্তচর, সাবেক গণঅধিকার পরিষদের সিন্ডিকেট রংপুরের কমিটি দখল করে নেয়। এইভাবে সাধারণ ছাত্রজনতার আন্দোলন একটি পকেট কমিটিতে রূপান্তরিত হয়।

আমার অবস্থান ছিল শুরু থেকেই স্পষ্ট, যতক্ষণ পেরেছি আমি এসব দালালচক্র ও অপকর্মের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সংগঠন যখন কেন্দ্রীয়ভাবে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়, তখন আর আমার হাতে তেমন কিছু ছিল না। এসব দেখে দ্রুতই আমি নিজেকে সরিয়ে নেই, নীরব পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকি। আমি অপেক্ষা করছিলাম, কবে এই বিশ্বাসঘাতকতাগুলোর মুখোশ উন্মোচিত হবে। এখনও অনেক কিছু আসেনি, তবে আমি আশাবাদী - একদিন সব বেরিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিবের বাসায় চুরি

আজ আমি তীব্র ক্ষোভ ও গভীর ঘৃণা নিয়ে, বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির ‘১ নং সংগঠক’ পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করছি। আজ ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত। যেন কেউ না ভাবে আমরা সবাই নীরব ছিলাম।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ:

১. শহীদ ও আহতদের রক্তের সাথে করা বিশ্বাসঘাতকতা;

২. সংগঠনের অভ্যন্তরে চাঁদাবাজ-দালালদের দাপট ও অপকর্মের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া;

৩. বৈছাআ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চরম নজরদারিহীনতা।

যারা আন্দোলনের রক্ত দিয়ে কেনা ব্যানারকে মামলা বাণিজ্য-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সরকারি অফিসে দালালি ও ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি বানিয়েছে; তাদের বিচারও একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। যারা শহীদের রক্তকে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জুলাই চলবে। আমরা জান দেব-জুলাই দেব না।”

প্রতিনিধি/এসএস