images

সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে মাদরাসাছাত্রকে বেত্রাঘাত, শিক্ষক পলাতক

জেলা প্রতিনিধি

২৫ মে ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম

লক্ষ্মীপুরে মাদরাসাছাত্র রাফিকে (৮) শিক্ষক মো. মাসুম কর্তৃক বেত্রাঘাতের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। শিক্ষক নিজেই ভিডিওটি করিয়েছেন। ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটির ২৩ সেকেন্ডে দেখা গেছে, ছাত্রকে ২১ বার বেত্রাঘাত করা হয়েছে। ভিডিও ভাইরালের পর থেকেই ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।

রোববার (২৫ মে) সকাল পর্যন্ত শিক্ষক মাসুমের সন্ধান দিতে পারেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

এর আগে (১৫ মে) বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আলীপুর নুরানি হাফেজিয়া মাদরাসায় ওই ছাত্রকে বেত্রাঘাতের ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষক আত্মগোপনে চলে যান। এ ঘটনায় তাকে মাদরাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুম সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের কালভার্ট এলাকার বাসিন্দা।

মাদরাসা সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগেই ঘটনাটি ঘটেছে। শিক্ষক মাসুম নিজেই ভিডিওটি করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে শিক্ষক মাদরাসায় আসে না। অমানবিক ঘটনা ঘটানোর কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে ছাত্রকে বেত্রাঘাতের ভিডিওটি নেটিজেনদের মনে দাগ কেটেছে। আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ভিডিওটি সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করে ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করছেন।

ভিডিওটি ভাইরালের ২ দিন আগে মঙ্গলবার (১৩ মে) লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের আল মুঈন একাডেমিতে ২০ পারা কোরআনের হাফেজ সানিম হোসাইনকে হত্যার অভিযোগ ওঠে শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথম ২৩ সেকেন্ডেই শিশুটিকে ২১ বার বেত দিয়ে আঘাত করা হয়। পুরো ভিডিওটিতেই শিশুটি কানে ধরে ছিল। এ সময় শিক্ষক শিশুটিকে মারতে মারতে কান ধরে ওঠবস করতে বলেন। তাতেও থামেনি মারধর।

আরও পড়ুন

মুন্সিগঞ্জে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে সমাধান করেছেন।এ কারণে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। এভাবে বিচারহীনতায় ঘটনাগুলো অহরহ ঘটবে।

আহত ছাত্রের নাম রাফি। সে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্য আলিপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও মাদরাসাটির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবারের বক্তব্য জানা যায়নি।

ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। রোববারও মাদরাসা খোলা হয়নি। স্থানীয়রাও মাদরাসা বন্ধ নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ঘটনাটি নিয়ে থানায় কোনো মামলাও হয়নি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে দুইজন শিক্ষক জানান, (১২ মে) সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটি পড়ালেখায় অমনোযোগী থাকায় শিক্ষক মাসুম তাকে শাস্তি দিয়েছেন। মাসুম নিজেই অন্য এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে ভিডিও করিয়েছেন। তবে কীভাবে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়েছে তা বলতে পারেননি কেউ।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি আজমুল হুদা মিঠু বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা চাকরিচ্যুত করেছি। বেত্রাঘাতের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি মাদরাসায় অনুপস্থিত।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই শিক্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

প্রতিনিধি/এসএস