images

সারাদেশ

ফারাক্কা চুক্তি বাতিলের দাবি, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি মিনুর

জেলা প্রতিনিধি

২৪ মে ২০২৫, ১০:১৪ পিএম

ফারাক্কা ইস্যুতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য ও মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। 

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক গণজমায়েত কর্মসূচিতে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ফারাক্কা চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়।

ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সামাজিক সংগঠন ‘নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য ও মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ভাসানী ফাউন্ডেশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ড. জি. এম. শফিউর রহমান।

সভাপতিত্ব করেন ড্যাব রাজশাহীর সভাপতি ও ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মো. ওয়াসিম হোসেন।

বক্তব্য রাখেন—বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ‘নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী জেলা শাখার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত বেগ, রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মাহমুদ হাসান, রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জমশেদ আলী, নিরাপদ সড়ক চাই রাজশাহীর সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক আহসান টিটু প্রমুখ।

এ সময় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আল্লাহ যদি আমাদের সুযোগ দেন, তাহলে আমরা আমাদের রক্তের মতো মূল্যবান পানির অধিকারের দাবিতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ফারাক্কার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলব।’

বক্তারা বলেন, ‘ভারত ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধন করে। এই ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য এক মরণফাঁদ। বিষয়টি উপলব্ধি করে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে ফারাক্কা লংমার্চ শুরু করেন। ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর অতিক্রম করলেও ভারত এখনো বাংলাদেশের ন্যায্য পানির অধিকার নিশ্চিত করেনি। তারা শুধু আশ্বাস দিলেও তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি।’

তারা আরও বলেন, ‘পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৪৪টি অভিন্ন নদী আজ বিলুপ্তির পথে। পানির অভাবে এসব নদী মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ এখন বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে প্রয়োজনে মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।’

তারা অভিযোগ করেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ফারাক্কা নিয়ে যে চুক্তি করেছিলেন, তা ছিল ভারতের পক্ষে। পরবর্তীতে বর্তমান স্বৈরাচার হাসিনা সরকার টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে ভারতকে একতরফাভাবে পানি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। কোনো প্রতিবাদ করেনি।’

সমাপনী বক্তব্যে বলা হয়, ‘ফারাক্কার পানি চুক্তি নিয়ে আর কোনো অপরাজনীতি বরদাশত করা হবে না। এটি দেশের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। তাই পানির অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ আওয়াজ তুলুন—অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদ। এই বাঁধ ভেঙে ফেলতে হবে। স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া অসম চুক্তি প্রত্যাখ্যান ও বাতিল করতে হবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গ্যারান্টি ক্লজযুক্ত গঙ্গা চুক্তি করতে হবে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ পানি প্রবাহ সনদে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাদবাকি ৫২টি নদীর জন্যও সামগ্রিক চুক্তি করতে হবে।’

প্রতিনিধি/একেবি