জেলা প্রতিনিধি
২৩ মে ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে বরগুনার আমতলী উপজেলার আটটি পশুর হাটে গরু, মহিষ ও ছাগলের সরবরাহ বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় কোরবানির জন্য ৮ হাজার ৮১৩টি পশুর চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্রস্তুত রয়েছে ৯ হাজার ৭০টি পশু। ফলে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৫৭টি পশু রয়েছে হাটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার তুলনায় পশু বেশি থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অনুপস্থিতি ও সড়কে চাঁদাবাজির কারণে বাজারে গরুর দাম তুলনামূলকভাবে কম।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের খ্যাতনামা গরু ব্যবসায়ী আলহাজ মাহবুবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এ বছর বাজারে গরুর সরবরাহ অনেক বেশি। বড় ও মাঝারি ধরনের গরুর দাম গত বছরের তুলনায় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কম। চাঁদাবাজির ভয়ে অনেক পাইকার আসছেন না। আমি এখন পর্যন্ত ৫২টি গরু বিক্রি করেছি, লাভের পরিমাণ খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় পাঠানোর জন্য ট্রাকে ২৭টি গরু লোড করেছি। কিন্তু পথে পথে অন্তত ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলছে।
নেত্রকোনার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম এবং নওগাঁর গফুর মিয়া জানান, সড়কে বারবার চাঁদা দিতে বাধ্য হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সড়কে চাঁদা বন্ধ হলে আমরা ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু এখন এই বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপরই পড়ে।
পশু পালকদের অনেকেই সরাসরি খামার থেকেই বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন। জিমি অ্যাগ্রো ভেট-এর মালিক আবুল বাশার নয়ন মৃধা জানান, আমার খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১৭টি গরু রয়েছে। বাজারে না গিয়ে খামার থেকেই বিক্রি করব। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী যোগাযোগ করছেন।
একইভাবে খামারি জাহাঙ্গির জানান, আমার খামারের ৮টি গরু আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের কাছাকাছি সময়ে দাম বাড়তে পারে, কিন্তু আমি সে ঝুঁকি নিইনি।
পশ্চিম চুনাখালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৪০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। আগের বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম।
আমতলী গরুর হাটের ইজারাদার আলাউদ্দিন মৃধা জানান, বাজারে গরুর সরবরাহ ভালো। এক হাটেই ৫০০ গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, বিক্রি আরও বাড়বে।
![]()
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশাসন সজাগ। আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, সব হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে নির্বিঘ্নে লেনদেন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তে বিশেষ নজরদারি থাকবে এবং সড়কে চাঁদাবাজি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদেকুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় পশুর সংখ্যা বেশি থাকায় সরবরাহ উদ্বৃত্ত থাকবে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দু’টি বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, পশুর হাটগুলোতে কঠোর নজরদারি চলছে। চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন সড়কে চাঁদা আদায় করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস