images

সারাদেশ

কুমিল্লায় কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাবে বিজিবি 

জেলা প্রতিনিধি

২৩ মে ২০২৫, ১১:১৮ এএম

কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সেখানে অবাধে ভারতীয় গরু আসে। যার কারণে দেশের খামারিদের প্রতিবছর লোকসানের কবলে পড়তে হয়। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। সামনের কোরবানি ঈদে ভারত থেকে যেন চোরাই পথে গরু আসতে না পারে, সে জন্য দেশের প্রশাসন হার্ড লাইনে রয়েছে। বিজিবির দাবি যে তারা সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন এবং কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাবেন।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার কুমিল্লায় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু উৎপাদন করা হয়েছে। এতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা যাবে। তবে কুমিল্লা জেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় অবৈধ পথে পশু প্রবেশের আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে প্রায় ১২০ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস

তারা বলছেন, কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগ থেকে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গবাদিপশু অনুপ্রবেশ করায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। যার কারণে বাধ্য হয়ে খামারিদের কম দামে গরু বিক্রি করতে হয়।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের দাবি, এবার কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র অনুসারে, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় এ বছর কোরবানির জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, ৬০৮টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯৪০টি ছাগল, ১১ হাজার ৮০৫টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি। জেলায় কোরবানিতে চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি পশুর। সেই হিসাবে এ বছর কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সরবরাহ করা যাবে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গোমতীর ওপারে শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বারেক জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার বেশ কয়েকটি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। বড় ও মাঝারি আকৃতির গরুর সর্বোচ্চ দাম তিন লাখ টাকা। ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু না এলে এবার খামারিরা লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন: দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে ৪ জনকে পুশইন

কুমিল্লা তানহা এগ্রোর জব্বার মিয়া বলেন, খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছে। আমার খামারে আট লাখ টাকা দামের একটি গরু রয়েছে। এটার ওজন হবে প্রায় এক টন। খাদ্যের দাম সহনীয় থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম।

কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের খামারের পশুসহ জেলায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু রয়েছে। ফলে উদ্বৃত্ত এসব পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও বিক্রি করা যাবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি যে এবার কুমিল্লায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পথে ভারত থেকে যাতে দেশে পশু আসতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও পশুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন ভারতীয় গরু আসছে না বললেই চলে। তার কারণ বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে। এরপরও শাহপুর ও শিবের বাজার সীমান্ত দু’টি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকায় বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এবার অন্তত চোরাই পথে কুমিল্লার অংশে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে পারবে না। এবার আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি।

প্রতিনিধি/ এমইউ