বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
২০ মে ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম
গত বছরের ৫ আগস্ট দীর্ঘ আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু বিপ্লবের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এখনো সিন্ডিকেট ও ডিনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে বহাল রয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। আন্দোলনবিরোধী অবস্থান নেওয়া এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের একাংশে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্দোলনবিরোধী অবস্থানের অভিযোগ
গত বছরের জুলাই মাসে চলমান গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন ৩১ জুলাই রাবিতে মানববন্ধন করে। সেখানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন কিছু শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, তারা সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও উসকানি দিয়েছেন। যদিও পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বহাল থাকা ব্যক্তিদের তালিকা
বর্তমানে ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন: আইন অনুষদ: আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদ: ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ: ড. এ. এস. এম. কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ: অধ্যাপক এস. এম. এক্রাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদ: অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক, ভূবিজ্ঞান অনুষদ: অধ্যাপক এ. এইচ. এম. সেলিম রেজা।
সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে রয়েছেন: অধ্যাপক হাসান মাহমুদ (রসায়ন বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার খালিদ বিন ফেরদৌস (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ), সহকারী অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম (ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ), প্রভাষক মো. রিজু খন্দকার (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ)।
ছাত্রসংগঠন ও নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া
রাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশের শিক্ষকরা ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার ছিলেন। তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের সাথে প্রতারণা করেছেন। অথচ আজও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি দ্রুত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপসারণের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘৩১ জুলাই যেসব শিক্ষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নতুবা আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের ১০ মাস পরেও প্রশাসনের নিরবতা আমাদের হতাশ করেছে। অপরাধীদের শাস্তির জায়গায় বরং তাদের সাথে আঁতাত চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী অভিযোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ চেয়ারে বসা ব্যক্তিরা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করেন না বলেই আমরা মনে করি। যারা সরাসরি আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়নি, বরং বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে তাদের রক্ষা করা হচ্ছে।’
প্রশাসনের অবস্থান
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই বিপ্লববিরোধী কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৯ মে পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে, এরপর তদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রতিনিধি/একেবি