১৭ মে ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
‘আগে অল্প কিছু ভাঙচুর করেছিল, আর গতকাল রাতে তালা ভেঙে সবকিছু নিয়ে গেছে। এখন ঘরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমনকি পানি খাওয়ার টিউবওয়েলটাও খুলে নিয়ে গেছে। ঘরে থাকা সামান্য চাল, থালাবাসনও লুটে নিয়েছে। যা করেছে, তা মানুষ মানুষের সঙ্গে করে না। এখন কোথায় থাকব, কী খাব—এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।’ বলছিলেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বৃদ্ধা রাশেদা বেগম।
তার অভিযোগ, এলাকার প্রতিপক্ষ মিলনের অনুসারীরা গত বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে মিলন মোল্যা গ্রুপের রফিকুল হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে যেসব বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রাশেদা বেগমের বাড়িও রয়েছে। তিনি জানান, রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের পর প্রথম দফায় তার বাড়িতে অল্পস্বল্প ভাঙচুর হয়, আর এবার ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রফিকুলের মরদেহ উদ্ধাররের পর মিলন পক্ষের রাশেদাসহ কয়েকজনের বাড়িতে দুই দফায় হামলা করেছে মিলন পক্ষের লোকজন। এ সময় পানি খাওয়ার টিউবওয়েল ও মটর খুলে নিয়ে যায়, এমনকি পুকুরের মাছ পর্যন্ত ধরে নিয়ে যায়। এলাকাছাড়া করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

গত চার-পাঁচ দিনে আফতাব পক্ষের রাশেদা বেগম, রেবেকা বেগম, শাহাদাত শেখ, আশরাফ মোল্যা, ফারুক মোল্যা, ফিরোজ মোল্যা, খলিল মোল্যাসহ অন্তত ৮-৯টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
আফতাব পক্ষের লোকজনের দাবি, রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন রফিকুলের মা। পাশাপাশি এই ক’দিনে মিলন পক্ষের লোকজন মিলন পক্ষের অন্তত ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
আফতাব পক্ষের রেবেকা বেগম বলেন, ‘গতকাল তারা আমার বুকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে বলেছে, ‘বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।’ আমি ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছি। এরপর আমার ঘরে হামলা চালিয়ে মালামাল লুটে নেয়। পুকুরের মাছও ধরে নিয়ে গেছে। পানি খাওয়ার মতো পরিবেশও নেই—টিউবওয়েল খুলে নিয়েছে, এমনকি বাথরুমটাও ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এখন এই বাড়িতে থাকার কোনো পরিবেশ নেই, অন্যের বাড়িতে খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিলন মোল্যার পক্ষের লোকজন। তাদের দাবি, সংঘর্ষে ফরিদ মোল্যা নিহত হওয়ার পর মিলন পক্ষের লোকজনই প্রথমে তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর রফিকুলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মিলন পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রফিকুলের মা। তারা আরও দাবি করেন, মিলন পক্ষের লোকজন নিজেরাই নিজেদের মালামাল সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ভাঙচুর, লুটপাট বা হুমকির সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নয়। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কাঞ্চনপুরের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ ভালো আছে।’
উল্লেখ্য, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিলন মোল্যা পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান পিকুল শেখ ও মিলন মোল্যা পক্ষের লোকজন। এতে পিকুল পক্ষের ফরিদ মোল্যা (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় মিলন পক্ষকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
এরপর ওই রাতেই মিলন পক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি মামলার পর যখন এলাকা উত্তপ্ত, তখন গত ২৯ এপ্রিল ফরিদ হত্যা মামলার ১৮ নম্বর আসামি রফিকুল ইসলামের মরদেহ পাওয়া যায় মিলন পক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে।

রফিকুল হত্যার ঘটনায় আবার মিলন পক্ষের লোকজনকে আসামি করে মামলা করেন রফিকুলের মা। এরপর থেকেই মিলন পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মিলন পক্ষের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিনিধি/একেবি