images

সারাদেশ

শখের গাছে থোকায় থোকায় ভিনদেশি ফল

জেলা প্রতিনিধি

১৭ মে ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম

বাঁশের মাচায় সবুজ রঙের থোকায় থোকায় ঝুলছে অসংখ্য আঙুর। চমৎকার দেখতে সেই আঙুরের থোকাগুলো। যদিও আঙুর একটি ভিনদেশি ফল, তবুও এই জনপ্রিয় ফলটি চাষে সফল হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের একজন কৃষক।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের শৌখিন কৃষক সৈয়দুর রহমান ফারুক শখের বসে মসজিদের ছাদ এবং বাড়ির আঙিনার আশপাশে আঙুর চাষ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জেলার মধ্যে এই প্রথমবারের মতো আঙুর চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।

সৈয়দুর রহমান ফারুক বলেন, “মাত্র দেড় বছরের মাথায় আমার আঙুর গাছে দুবার ফলন এসেছে। গত বছর প্রথমবার ফল ও চারা বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়, যা মসজিদের উন্নয়নকাজে ব্যয় করেছি। এ বছর ফলন আরও ভালো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আঙুরের গাছ থেকে প্রচুর চারা তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সরবরাহের ইচ্ছা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে আঙুর চাষ হলে ফরমালিনমুক্ত ও স্বাস্থ্যঝুঁকিহীন মানসম্মত ফল পাওয়া যাবে। অক্টোবর-নভেম্বরে গাছ ছাঁটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। বাড়তি খরচ তেমন একটা নেই। জৈব সার ব্যবহার ও নিয়মিত পরিচর্যায় ভালো ফলন সম্ভব। একটি গাছে বছরে তিনবার পর্যন্ত ফল আসে, এবং প্রতিটি গাছ থেকে দেড় থেকে দুই মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।”

তিনি জানান, গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাঁশের খুঁটি ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। চলতি বছরের মার্চে গাছে ফুল আসে, এপ্রিল থেকে ফল ধরতে শুরু করে। বর্তমানে গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণ আঙুর ফলে ভরে গেছে মাচাগুলো।

ফারুক আরও জানান, আঙুরের ১২৬টি প্রজাতি রয়েছে। তার ইচ্ছে, সিলেটের মাটিতে এসব বিভিন্ন জাতের আঙুর চাষ করে সবাইকে দেখানো যে এই অঞ্চলেও আঙুর উৎপাদন সম্ভব। এবার তিনি আঙুর ও চারা বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন। এর কিছু অংশ মসজিদের জন্য দান করবেন এবং বাকি আঙুর আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

সম্প্রতি তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ও চোখজুড়ানো আঙুর। খেতে এগুলো অনেকটা মিষ্টি। চাষি জানান, আরও দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে আঙুর পাকতে শুরু করবে, তখনই তিনি ফল সংগ্রহ করবেন।

জানা যায়, ফারুক মূলত একজন কৃষক। কৃষির সঙ্গে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বাড়ির ফসলি জমি ও মসজিদের ছাদে নানা সময় সবজির চাষ করা ছিল তার শখ। একসময় ইউটিউবে আঙুর চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সিদ্ধান্ত নেন নিজেও আঙুর চাষ করবেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে যশোর থেকে ৪০টি আঙুরের চারা নিয়ে আসেন। এর মধ্যে ১৮টি চারা মসজিদের ছাদে এবং বাকিগুলো বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। স্ত্রীসহ কৃষি অফিসের পরামর্শে নিয়মিত পরিচর্যা করেন।

angur

বর্তমানে তার বাগানে ৩৫টি আঙুর গাছ রয়েছে এবং প্রতিটি গাছে এসেছে প্রচুর ফল।

শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন বলেন, “আমরা বরাবরই ব্যতিক্রমী কৃষিকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। এই কৃষককে সবসময় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”

প্রতিনিধি/একেবি