images

সারাদেশ / শিক্ষা

আবেগ ও ভালোবাসার প্যারিস রোডের এক সকালে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৪ মে ২০২৫, ১২:২২ পিএম

ঝিরিঝিরি মৃদুমন্দ বাতাস, সোনা ঝরা শিশিরের টুপটাপ ফোঁটায় বর্ষণ, পাখিদের কলকাকলিতে বাদ্যযন্ত্রের মহড়া, সঙ্গে গগনশিরীষের পাতাদের এলোপাতাড়ি নৃত্য, অতঃপর স্বর্গরাজ্যে আঁধারের বুক চিরে ক্ষীণ আলোর সঙ্গে স্নিগ্ধ প্রভাতের রাজকীয় আগমন।

paris

প্রত্যহে ঠিক এভাবেই যেন প্রভাত নামে ৭৫৩ একরের সমৃদ্ধ রাজ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদি প্রভাতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কী এবং কেমন হয়ে থাকে তা পরখ করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই নিগূঢ় প্রকৃতি প্রেমী হওয়ার পাশাপাশি একটি কাক ডাকা ভোর অতিবাহিত করতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে।

thumbnail_RU-Paris-Road

যেখানে উঁচু উঁচু গগন শিরীষগুলো রাজ প্রহরীর ভূমিকায় আপনাকে স্বাগত জানাতে হয়ে থাকবে উদগ্রীব। মৃদুমন্দ বাতাস যখন আপনাকে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিতে বাধ্য করবে ঠিক তখনই গাছ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় শিশিরের স্বচ্ছ জল আপনাকে ফুলের পাপড়ি হয়ে বরণ করবে। মাথার উপরে তাকাতেই আলো-আঁধারের সন্ধিক্ষণে দেখতে পাবেন কিশলয়দের চরম উন্মাদনা। টিয়া, শালিক, প্যাঁচাদের অকাতরে গেয়ে যাওয়া গানের সুরের তালে তালে নাচের মহিরণের মাধ্যমে আপনাকে করবে তারা সম্ভাষিত।

thumbnail_1000089900

হঠাৎ সূর্যি মামা গগনের আকাশচুম্বী এলোকেশের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারবে, ছিটে রোদ্দুর এসে পড়বে আপনার তনুতে, প্রভাব পড়বে মনের গহীনে। ঝিরঝিরে এক শকের সঙ্গে মিশ্রিতভাবে অনুভব করতে পারবেন স্নিগ্ধ বাতাস, নাম না জানা ফুলের সুবাস, শিশিরের জলের ছোঁয়া ও মিষ্টিরোদের নিদারুণ নিষ্পেষণ।

thumbnail_paris-road-ru-20221016103156

এই অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের মাঝে হারিয়ে গিয়ে রায়হান আলম বলেন, প্রতিদিনের সেই একই রুটিন, একই ক্লাস, একই ব্যস্ততা। তবে ভোরবেলার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একদমই আলাদা। ঠিক যেন প্রকৃতির হাতে লেখা এক জীবন্ত কবিতা। স্নিগ্ধ বাতাসে ভেসে আসা নাম না জানা ফুলের সুগন্ধ, শিশির ভেজা ঘাসের কোমল স্পর্শ, আর পাখিদের কলরবে ভোরের প্রথম আলোয় যখন চারদিক ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। মনে হয় এ যেন স্বর্গীয় কোনো রাজ্য। প্রতিদিন ভোরের এই অনুভূতিটা যেন নতুন করে বাঁচায়, মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির কাছে আমাদের ঋণ চিরদিনের।

thumbnail_1000089900

নৈসর্গিক এমন সৌন্দর্যের সুধা পানে ভোরে সেখানে পাড়ি জমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নিগ্ধ সকালের পরশে ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য। নরম কুয়াশার চাদর মেখে জেগে ওঠে দিগন্ত। ডালে ডালে দুলে ওঠে কচি রোদের আলতো ছোঁয়ায় পাখিদের গানের মিছিল। চড়ুই, দোয়েল, শালিক প্রতিটি কণ্ঠে যেন একেকটি কবিতা যা গেয়ে ওঠে ভোরের এক প্রেমময় গল্প। ফুলেরা যেন ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় পৃথিবীর দিকে, গোলাপের ঠোঁটে শিশির বিন্দু, বেলিফুলে বাতাসের কাব্য। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে লেগে যায় ঘাসের স্নেহস্পর্শ, মনে হয় প্রকৃতির কোলে বসে থাকা এক শান্ত শিশুর মতো দিন শুরু হয়েছে। এই ভোর যেন হৃদয়েরও এক নতুন জাগরণ। তুমি কি কখনও এই সকালের গন্ধ টেনে নিতে চেয়েছ গভীরভাবে, যেখানে কবিতা আর প্রকৃতি একসঙ্গে নিশ্বাস ফেলে?

প্রতিনিধি/এসএস