বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
১৩ মে ২০২৫, ০৪:০০ পিএম
৩৬ বছর পর আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পা রাখতে যাচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দীর্ঘদিন পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তন হচ্ছে এক অনন্য উপলক্ষে—বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাবর্তনের প্রধান বক্তা হিসেবে।
আগামী ১৪ মে চবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের ইতিহাসে একই স্থানে সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে আয়োজিত সমাবর্তন। এতে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থী।
সমাবর্তনের প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ঐতিহাসিক আয়োজনে গৌরব যুক্ত করবেন চবির প্রাক্তন শিক্ষক ড. ইউনূস, যাঁকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
সমাবর্তনের সময়সূচি ও অংশগ্রহণকারীরা
এই মহা-আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে ১৪ মে, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এতে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২,৫৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি এবং ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন।
অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণ
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ: ৪ হাজার ৯৮৭ জন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ: ৪ হাজার ৫৯৬ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ: ৪ হাজার ১৫৮ জন, বিজ্ঞান অনুষদ: ২ হাজার ৭৬৭ জন।
ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা
সমাবর্তন আয়োজনের আনুমানিক ব্যয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে এসেছে প্রায় ৬ দশমিক ৫ কোটি টাকা; বাকি অর্থ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), এবং স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলো।আয়োজন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৯টি উপকমিটি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টার পর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। ব্যক্তিগত যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকবে পার্কিং এবং বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে ৪টি বিশেষ শাটল ট্রেন। অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।
গাউন বিতরণ, খাবার ও উপহার সামগ্রী
সমাবর্তন শিক্ষার্থীরা ১২ মে থেকে নিজ নিজ বিভাগ থেকে গাউন ও টুপি সংগ্রহ করছেন। সমাবর্তনের দিন সকাল ৭টা থেকেও এগুলো সংগ্রহ করা যাবে। অনুষ্ঠান শেষে গাউন জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা সনদ ও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করবেন।
এবারের সমাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার উপহার সামগ্রী। প্রতিটি কম্বো বক্সে থাকবে: একটি জুটের ব্যাগ, কোর্ট পিন, কলম, মোবাইল ওয়ালেট।
সম্প্রচার ব্যবস্থা
সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। যাঁরা মূল মাঠে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, তাঁদের জন্য শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ পাঁচটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা।
বিশেষ বার্তা ও লোগো
সমাবর্তনের লোগোতেও রয়েছে বিশেষ বার্তা। এতে ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস—জুলাই বিপ্লব, শহীদ আবু সাইদের প্রতিকৃতি এবং সবুজ ক্যাম্পাসের প্রতিচ্ছবি। লাল ও সবুজ রঙের ব্যবহার আয়োজনের আবেগ ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী বলেন, ‘একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। সবাই যেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে অংশগ্রহণ করেন, এটাই প্রত্যাশা। সমাবর্তনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জরুরি নির্দেশনাগুলো দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘৫৮ বছরের ইতিহাসে চবিতে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি—একই মঞ্চে এতো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ, বিশ্বের ইতিহাসে এটিই হবে প্রথম।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানসূচি (১৪ মে)
অনুষ্ঠানটি শুরু হবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, অতিথিবৃন্দের আসন গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। বিকেল ২টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে এবং ২টা ৫ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হবে। ২টা ১৫ মিনিটে সমাবর্তনের সভাপতি ও ভাইস-চ্যান্সেলর সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। পরবর্তী সময়ে, ২টা ১৬ মিনিটে প্রো ভিসি (শিক্ষা) স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন।
এরপর, বিকেল ২টা ২০ মিনিটে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট. ডিগ্রি প্রদান করা হবে এবং ২টা ৩০ মিনিটে ভিসি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করবেন। ৩টা থেকে প্রো ভিসি (প্রশাসন) শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন, এবং এরপর যথাক্রমে ইউজিসি চেয়ারম্যান (৩টা ০৫ মিনিট), শিক্ষা উপদেষ্টা (৩টা ১০ মিনিট) এবং সমাবর্তন বক্তা (৩ টা ১৫ মিনিট) বক্তব্য প্রদান করবেন।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। এরপর ৩টা ৫০ মিনিটে সভাপতি তাঁর বক্তব্য প্রদান করে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে ৪টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৪টা ১ মিনিটে সমাবর্তন বক্তার প্রস্থান করার মাধ্যমে।
প্রতিনিধি/একেবি