images

সারাদেশ

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিকে এলপি গ্যাস খালাসে অনিয়ম

০৭ মে ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম

  • অধিকাংশ লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ
  • ভুয়া পরিবেশকের ছড়াছড়ি
  • প্রমাণ পেল দুদক

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) থেকে এলপি গ্যাস খালাসে নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবেশকের নামে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে নিয়মিত গ্যাস খালাস পাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ভুয়া পরিবেশকও। এর মধ্যে একজন পরিবেশকের কাছে পাওয়া গেছে ৮০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকার তথ্য।

বুধবার (৭ মে) এসব তথ্য জানান দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত অঞ্চল-১ এর কর্মকর্তা সাইয়েদ আলম। তিনি বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অস্তিত্বহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী এবং ভুয়া পরিবেশকের তথ্য খুঁজতে অভিযান চালায় দুদক। ৬ মে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা সাইয়েদ আলম বলেন, এলপি গ্যাস লিমিটেড থেকে যে গ্যাসগুলো বাজারে সরবরাহ করা হয়, সেগুলোর ডিস্ট্রিবিউটর এসএওসিএল, পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অনেক ডিলারের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

তাদের মধ্যে ডি ভি গ্যাস সাপ্লাইয়ার এবং সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্স যাচাই করা হয়েছে। তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, তবুও তারা তিন-চার বছর ধরে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছিলো। এসএওসিএল থেকে গ্যাস কিনে ব্যবসা করছিলো মেসার্স ডি ভি গ্যাস এবং মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি।

ডি ভি গ্যাসের বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে নেওয়া লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর মেসার্স সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হলে প্রতিষ্ঠানটির নামে গ্যাস বিক্রি করা যায় না। তবে দুটি প্রতিষ্ঠানই এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছিলো মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়েই।

দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা দেখেছি, এসএওসিএলের ডিলারের সংখ্যা মোট ৩৩৬ জন। এর মধ্যে প্রায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যারা বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে এলপি গ্যাস পাচ্ছে, যা পাওয়ার কথা নয়।

এছাড়া, একজন অথরাইজড পার্সন ৮০টি প্রতিষ্ঠানের অথরাইজেশন কিভাবে পায়? তবে এখানে ডিলারশিপ নীতিমালাও দেখাতে পারেনি আমাদের। আমরা সেটাও দেখব, একজন অথরাইজড পার্সন ৮০টি প্রতিষ্ঠানের অথরাইজড পার্সন হতে পারে কি-না। এর জন্যই মূলত সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে বাজারে এবং বেশি দামে গ্যাস কিনতে হয়।

এমন কারসাজিতে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুর্বের যারা সিইও, এমডি কিংবা সেলস-এ ছিলেন, বিশেষ করে এসএওসিএলের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুল সালাম মীর ও তাদের গাফিলতির কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি সিন্ডিকেটও এখানে রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যারা আছেন তারা স্বীকার করেছেন যে তাদের কিছু গ্যাস রয়েছে। নতুন সিইও অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন, অনেকগুলো কমিটি গঠন করেছেন, বিভিন্ন ডিলারদের চিঠি পাঠাচ্ছেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম মীরের কাছে রেকর্ডপত্র চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সহযোগিতা না করায় প্রতিবেদনে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, এখন পর্যন্ত বিপিসি থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

আমরা রেকর্ডপত্র দেখব, যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করব। মূলত সেলস ডিপার্টমেন্ট এখানে জড়িত বলে জানান দুদক কর্মকর্তা সাইয়েদ আলম।

উল্লেখ্য, এসএওসিএল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানি থেকে এলপি গ্যাস কিনে ব্যবসা করেন ৩৩৬ জন পরিবেশক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা এবং বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় গ্যাস নিয়ে যান এই পরিবেশকরা।

DODAK

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসএওসিএল থেকে শুধু গ্যাস নয়, তেল ও বিটুমিন সরবরাহ নিয়েও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে খুড়ে খুড়ে খেয়েছে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সর্বশেষ এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনি লাল দাশ শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহাল তবিয়তে কর্মরত রয়েছেন বিপিসিতে। তার ব্যতিক্রম নয় বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম হিমেলও।

এ বিষয়ে জানতে বিপিসির চেয়ারম্যান অমিন উল আহসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।

প্রতিনিধি/একেবি