images

সারাদেশ

এখন কৃষ্ণচূড়ার দিন

জেলা প্রতিনিধি

০৭ মে ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম

পলাশ-শিমুল যদি হয় বসন্তের প্রতীক, কদম যদি বর্ষার, তবে কৃষ্ণচূড়া নিঃসন্দেহে গ্রীষ্মের প্রতীক। এই গ্রীষ্মেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে এখন যেন আগুন লেগেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল।

যান্ত্রিক শহরবাসীর মনে গ্রীষ্মের ফুল কীভাবে জায়গা করে নেয়, তা স্পষ্ট নয়। তবে, ফুলের ঘ্রাণ না শুঁকলেও ছবি ঠিকই জায়গা করে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে—বিশেষ করে কৃষ্ণচূড়ার।

এখন সত্যিই কৃষ্ণচূড়ার সময়। চারদিকে লাল আভায় ছড়িয়ে ফুটেছে এ ফুল। ছোট-বড় সকলেরই এই ফুল খুব পছন্দ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের সুগন্ধ অদ্ভুতরকম মনোমুগ্ধকর—যা মনকে করে আনন্দিত, হৃদয়কে দেয় প্রশান্তি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী,
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানে রয়েছে,
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জরী কর্ণে—
আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে।’

মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন,
‘বসুধা নিজ কুন্তলে
পরেছিল কৌতূহলে
এ উজ্জ্বল মণি,
রাগে তারে গালি দিয়া,
লয়েছি আমি কাড়িয়া—
মোর কৃষ্ণচূড়া কেনে পরিবে ধরণী?’

বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও উপমায় কৃষ্ণচূড়া নানা রঙে এসেছে।

বুধবার (৭ মে) সকালে চায়ের শহর শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে গিয়ে দেখা গেল সেই রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। ওই সড়কের ‘বধ্যভূমি ৭১’-এর সামনে থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। তার পাশেই দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা সবুজ চা-বাগান।

SS

এই জায়গায় গিয়ে দেখা মেলে লাল-সবুজের অপূর্ব মিশেলে সাজানো এক প্রকৃতির। যেন প্রকৃতি নিজেই সেজেছে তার রঙিন সাজে।

স্থানীয়রা জানান, চায়ের দেশ হিসেবে খ্যাত পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুল এবং সোনালুর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের দু’পাশে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব গাছে ফুল ফুটে রাস্তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এখানকার কৃষ্ণচূড়ার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তা দেখে অনেকেই ছুটে আসছেন দূরদূরান্ত থেকে।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জ জেলা শহরের ডাকঘর এলাকার সজিব আহসান। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখানকার কৃষ্ণচূড়ার নানা ভিডিও দেখে এসেছি। এই সড়কের দু’পাশে ছড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ফুল আর উজ্জ্বল সবুজ পাতা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।’

‘চায়ের দেশ এমনিতেই সুন্দর, এখন এই ফুল রাস্তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রকৃতিকে যেন নতুন করে সাজিয়েছে এই কৃষ্ণচূড়া,’ বলেন সিলেট থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী জয়শ্রী পাল।

মৌলভীবাজার বাপার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া যখন ফোটে, প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সাজে। লাল টকটকে এবং হলুদাভ কৃষ্ণচূড়া মনকে করে আলোড়িত। তবে বৃক্ষ নিধনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া গাছ। প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কৃষ্ণচূড়া গাছের তুলনা নেই। তাই জেলার বিভিন্ন রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর দাবি জানাচ্ছি।’

শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস বলেন, ‘উষ্ণ আবহাওয়ায় দৃষ্টি ও মনকে প্রশান্ত করতে কৃষ্ণচূড়ার জুড়ি নেই। গ্রীষ্মজুড়ে পাতাহীন গাছেও থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। এই রুক্ষ, শুষ্ক মৌসুমে কৃষ্ণচূড়া মনকে দেয় শীতল পরশ, ক্লান্তি দূর করে জাগিয়ে তোলে নব উদ্যমে। বিশেষ করে বৈশাখ মাসেই কৃষ্ণচূড়া ফোটে সবচেয়ে বেশি। তখন বাংলাদেশের নানা জায়গায় থোকা থোকা ফুল ফুটে তার স্বতন্ত্র সৌন্দর্য নিয়ে।’

KRISNO-CHORA-44

উদ্ভিদবিদদের মতে, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া এ ফুলের জন্য উপযোগী। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া ফোটে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডেলোনিক্স রেজিয়া’।

প্রতিনিধি/একেবি