images

সারাদেশ

কুমিল্লায় মাটি খুঁড়তে বেরিয়ে এলো প্রাচীন স্থাপনা

জেলা প্রতিনিধি

০৫ মে ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের একটি বসতভিটায় মাটি খননের সময় হঠাৎ করেই উন্মোচিত হলো লাল ইটের প্রাচীন দেয়াল। মাটির নিচে লুকিয়ে ছিল শতবর্ষ, এমনকি তারও বেশি সময় আগে নির্মিত কোনো এক স্থাপনার অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, এটি কোনো রাজা বা জমিদার আমলের বাসস্থান বা প্রশাসনিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে।

সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার ঘিরে ধর্মপুরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। চারা বাড়ি এলাকার মানুষজন এখন প্রতিদিন ভিড় করছেন পুরোনো সেই দেয়াল দেখতে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন তার বাড়ির নির্মাণকাজ শুরুর আগে জমির মাটি সমান করছিলেন। ঠিক তখনই শ্রমিকদের হাতের কোপে উঠে আসে অস্বাভাবিকভাবে পাথরের মতো শক্ত কিছু ইটের গাঁথুনি। সেসব ইট ছিল আকারে বড়, অনেকটা মুঘল আমলের স্থাপনায় ব্যবহৃত ইটের মতো।

খনন_৩

তিনি বলেন, প্রথমে ভেবেছি পুরনো কোনো ভিটা, কিন্তু ইটের ধরন দেখে বোঝা যায় এটি সাধারণ কিছু নয়, বলেন জসিম উদ্দিন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি দল। শুরু হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের খনন ও অনুসন্ধান কাজ।

স্থানীয় তরুণ ফয়সাল সদ্দার বলেন, ইতিহাস বইয়ে আমরা যে কুমিল্লার কথা পড়েছি, সেই ইতিহাস যদি নিজের চোখে দেখতে পারি, সেটাই হবে বড় পাওয়া।

আরও পড়ুন

কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ করল এলাকাবাসী

ধর্মপুরের স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এখানকার সব নিদর্শন সংরক্ষণ করুক। এতে ভবিষ্যতে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তার বলেন, ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অঞ্চল বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা ও বাংলার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। এমন আবিষ্কার সেই সংযোগের প্রমাণ দেবে হয়তো।

খনন_২

ইতিহাস গবেষক ও নগর ইতিহাসবিদ আহসানুল কবির মনে করেন, এই খনন কুমিল্লার প্রাচীন শাসনব্যবস্থার ইতিহাস জানার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। সপ্তম  শতক থেকেই এই অঞ্চলে নানা রাজবংশের শাসন ছিল। ধর্মপুরের আবিষ্কার সেসব ইতিহাসের নতুন সূত্র দিতে পারে, বলেন তিনি।

জেলা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, আমরা মাত্র খনন কাজ শুরু করেছি। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।

তিনি আরও বলেন, তারা পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে পূর্ণাঙ্গ খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করে প্রাথমিক বিশ্লেষণের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লার এ প্রাচীন স্থাপনাটি সংগ্রহ করা হলে ভবিষ্যতে এখানে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হবে। এ প্রচীন স্থাপনাটিকে ঘিরে সেখানকার মানুষের জীবিকার নির্বাহ হবে।

প্রতিনিধি/এসএস