জেলা প্রতিনিধি
০৩ মে ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট এলাকায় একটি ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আশপাশের প্রায় ১২০ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অন্তত ৪৫ জন কৃষক এই ঘটনায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ইটভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। গাছপালায় ফল ধরছে না, এমনকি আত্মীয়স্বজনেরাও ধোঁয়ার দুর্গন্ধে তাদের বাড়িতে আসতে চান না। ক্ষতিগ্রস্তরা ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ধানখেত সোনালি দেখালেও বাস্তবে তা চিটায় পরিণত হয়েছে। যেসব জমিতে এখনও ধানের শীষ বের হয়নি, সেগুলোও বিবর্ণ ও শুকিয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, এপ্রিল মাসজুড়ে আরএনবি ইটভাটায় প্রচণ্ড তাপে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। এরপর থেকেই খেতের ধান শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক একরামুল বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে আমরা ঘরের ধানের ভাত খেতে পারছি না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে।’
আরেক কৃষক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর ধান পুড়ে যাবে, আর আমরা আশ্বাসেই থাকব—এটা হতে পারে না। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই এবং ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাই।’
ইটভাটার মালিক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের অভিযোগ শুনেছি। তবে ধানখেত নষ্ট হওয়ার জন্য আমার ইটভাটার ধোঁয়াই দায়ী কি না, তা যাচাই করতে হবে। প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরমান আলী জানান, ‘আমার কাছে কৃষকরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন—৭৫ বিঘা জমির ধান, তিন বিঘা জমির কলা ও দুই বিঘা জমির ভুট্টা খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগেও এই ইটভাটার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে গরম আবহাওয়া ও ইটভাটার গরম ধোঁয়াকেই বোরো ধানের ক্ষতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এ বিষয়ে ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে ক্ষতির কারণ নির্ধারণ করবে এবং কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/একেবি