জেলা প্রতিনিধি
০৩ মে ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ও পাশের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি নির্মাণ করা বাঁধটি অবশেষে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
শুক্রবার (২ মে) সন্ধ্যায় হাজার হাজার গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খরপাপাড়া ও পাশের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের আইরমারী গ্রামে নির্মিত বাঁধ দু’টি ভেঙে ফেলা হয়। এতে করে সাময়িক সমস্যা সমাধান হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, দশানী নদীর দুই স্থানে পাল্টাপাল্টি বাঁধ দেওয়ার ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে ডুবে যায় শত শত একর জমির কাঁচা-পাকা ধান।
![]()
স্থানীয়দের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দশানী নদীতে নির্মিত বাঁধ দু’টি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। তবে বাঁধ দু’টি ভেঙে ফেলতে প্রশাসনের নির্দেশনা ইতোপূর্বে অমান্য করেছে আইরমারী গ্রামবাসী। এ নিয়ে বাঁধ অপসারণের পক্ষে বিপক্ষে দু’টি গ্রুপের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়৷
গত বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানার নেতৃত্বে চর আইরমারী এলাকায় নির্মিত বাঁধটি ভাঙতে গেলে ওই গ্রামের লোকজন বাঁধ ভাঙতে বাধা দেয়। এতে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের শেখপাড়া ও মেরুরচর ইউনিয়নের চর আইরমারী গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা উল হুসনা দুই ব্যক্তিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, চর আইরমারী গ্রামের সোনার উদ্দিনের ছেলে রহমত আলী (৪০) ও মৃত হাসেন আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (৩২)।
জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপড়াপাড়ায় দশানী নদীতে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এবার এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে উক্ত খাপড়াপাড়া এলাকায় সম্প্রতি নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। ওই বাঁধের ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী, শেখপাড়া, খানপাড়া, বাঙালপাড়া, মদনেরচর, নীলেরচর, কুতুবেরচর, চরগাজিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দারাও নদীতে আরেকটি পালটা বাঁধ নির্মাণ করে। পাল্টাপাল্টি দু’টি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে উজানের পানি ভাটিতে আসার পরিবর্তে উলটো ভাটির পানি উজানের দিকে আসে। এতে উজানে দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। বন্যায় তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় কৃষকরা পানির নিচ থেকে ধান কেটে নেন।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, বাঁধ নির্মাণকারী দু’পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর অবশেষে বাঁধ দু’টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে উভয় গ্রামে স্বস্তি ফিরেছে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের খবর পেয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করেছি। উভয় পক্ষ বাঁধ অপসারণে সম্মত হওয়ার পরে বাঁধটি অপসারণ করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস