images

সারাদেশ

যশোরে ৩০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড কৃষকের স্বপ্ন

জেলা প্রতিনিধি

২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৮ পিএম

যশোরে ৩০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কৃষকদের স্বপ্ন। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা। শিলাবৃষ্টি এবং তীব্র বাতাসে কৃষকের খেতের ধান, শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মাঠে জমে থাকা পানি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের কারণে চাষিরা এখন চরম দুর্ভোগে। 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে যশোরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয় এবং ঝড়টি ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করে। ঝড়ের সাথে প্রবল বৃষ্টিপাতও হয়, তবে এখনো বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। একযোগে বৃষ্টি ও ঝড়ে একে একে কৃষকের ক্ষেতের ফসল পড়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় অনেক জায়গায় ফসল পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে, শিলাবৃষ্টির ফলে ধান ও অন্যান্য ফসলের বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকরা যে ধান ঘরে তুলেছেন, তা কিছুটা নিরাপদে রয়েছে। কিন্তু মাঠে এখনও প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ পাকা ধান পড়ে রয়েছে। আর কৃষকদের দাবি, তাদের মতে, মাঠে এখনও প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ধান অবশিষ্ট রয়েছে যা ঝড় ও বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকদের দুর্ভোগ
কৃষকরা জানিয়েছেন, এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। চৌগাছার শহিদুল ইসলাম, যিনি ১৮ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন, তিনি জানান, ‘ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে আমার সমস্ত ধান মাটিতে পড়ে গেছে। আমি যে পরিশ্রম করেছি, সব কিছু এক মুহূর্তে নষ্ট হয়ে গেছে।’

কৃষক আকবর আলী জানালেন, তিনি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ‘ধান কেটে রাখার পর এখন তা পানিতে ভাসছে। আমি এখন কী করবো? ঋণ পরিশোধ করার তো কোনো উপায় নেই,’ বলেন আকবর আলী।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি গরু বিক্রি করে ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু ঝড়ে সমস্ত ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। আমি এখন কি করব, বুঝতে পারছি না।’

রমজান আলী নামক আরেক কৃষক জানান, ‘শিলাবৃষ্টির কারণে আমার সবজি চারা নষ্ট হয়ে গেছে। চারার মাথা কেটে পড়েছে এবং আমার সারা বছরের পরিশ্রম একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।’

অর্থনৈতিক বিপর্যয়
ফারুক হোসেন, যিনি কিছুদিন আগে ধান চাষের জন্য সার, বীজ, ডিজেল ও কীটনাশক কিনেছিলেন, তিনি বলেন, ‘আমার সমস্ত জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছে। সার, বীজ, ডিজেল, কীটনাশকের দোকানে হালখাতা করবো কীভাবে? আমি এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো, তা নিয়ে চিন্তিত।’

এছাড়া, যশোরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানিয়েছে যে, তারা এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারেননি। কৃষকদের মতে, সরকার যদি আগেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেয় এবং তাদের উপযুক্ত সাহায্য প্রদান করে, তাহলে তাদের কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।

প্রতিনিধি/একেবি