images

সারাদেশ

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তালা, নষ্ট হওয়ার শঙ্কা জয়পুরহাট লাইব্রেরির ২০ হাজার বই

জেলা প্রতিনিধি

২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম

ঐতিহ্যবাহী জয়পুরহাট লাইব্রেরি ও ক্লাবের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তালা লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ভবনের ভেতরে থাকা প্রায় ২০ হাজার মূল্যবান বই এখনও অন্যত্র সরানো হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব এবং পোকামাকড়ের আক্রমণে এসব বই দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লাইব্রেরি ভবনটি সংস্কার করে বইগুলো নিরাপদ স্থানে সরানোর দাবি জানাচ্ছেন পাঠক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানসংলগ্ন জেলা পরিষদের জায়গায় একটি বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় জয়পুরহাট লাইব্রেরি ও ক্লাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ পাঠকদের জন্য অন্যতম পাঠাগার হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি সংস্কার না করায় বর্তমানে তা ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। ছাদ ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে, খুলে পড়েছে পলেস্তারা। এসব কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সিলগালা করা হয়।

ভবনের ভেতরে ইতিহাস, সাহিত্য, নাটক, রম্যরচনা এবং নানা বিষয়ের প্রায় ২০ হাজার মূল্যবান বই রয়েছে। তবে এখনও সেগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়নি। ফলে পাঠকদের মাঝে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক কাঞ্চন হোসেন জানান, তার বাবা এই লাইব্রেরির পাঠক ছিলেন, তিনিও নিয়মিত আসতেন। এখন ভবন বন্ধ থাকায় বই পড়ার সুযোগ নেই। তার মতে, বইগুলো যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মূল্যবান ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

ক্লাব সদস্য আব্দুল হামিদ বাবু জানান, প্রায় সাত মাস আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালাবদ্ধ করা হলেও এর মধ্যে থাকা বই ও আসবাবপত্র এখনও নিরাপদ স্থানে সরানো হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তার।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১২ বছর ধরে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজা চৌধুরীর একক নিয়ন্ত্রণে ক্লাব পরিচালিত হয়ে আসছে। এই সময়ে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, ফলে ক্লাবের কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

এই বিষয়ে রাজা চৌধুরী বলেন, ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকগুলো আলমারি ও বই রয়েছে, যা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা প্রয়োজন। আগের ডিসির সময় মন্ত্রণালয়ে কাগজ পাঠানো হয়েছিল, এক কোটি টাকার বাজেটও এসেছিল, কিন্তু পরে জানানো হয় যে, এত টাকা একটি লাইব্রেরির জন্য দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সমাধান পাননি।

সরকারি গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোর্শেদা বিনতে মামুন বলেন, মূল্যবান বইগুলো যেন নষ্ট না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি নিজেও এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।

জেলা প্রশাসক আফরোজা আক্তার চৌধুরী জানান, বিষয়টি জেনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে থেকে বাজেট না এলে জেলা পরিষদের তহবিল থেকে ভবন সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি বই দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর এবং ক্লাব কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/একেবি