জেলা প্রতিনিধি
২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
হবিগঞ্জ জেলা পাহাড়, বনাঞ্চল ও হাওরবেষ্টিত একটি অঞ্চল। নতুন করে এখানে শিল্পাঞ্চলও গড়ে উঠেছে। এ বছর জেলার পাহাড়ি গাছে গাছে ফলের রাজা কাঁঠালের ব্যাপক মুচি এসেছে। আশানুরূপ মুচি আসতে দেখে পাহাড়ি চাষিরা সন্তুষ্ট। বৈশাখ মাস চলছে, এখন কাঁঠাল গাছে মুচি দেখা যাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে, আর সেই সময় কাঁঠাল বিক্রি ও খাওয়ার ধুম পড়বে। পাকা শুরু হলেই পাহাড়ি টিলা এবং সমতল অঞ্চল থেকে কাঁঠাল আসবে পাইকারি বাজারে। অনেকে অগ্রিম টাকার বিনিময়ে মুচি কাঁঠাল গাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়—হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অনেক কাঁঠাল বাগান রয়েছে। শুধু কি তাই, বাড়ির আঙিনা এবং রাস্তার পাশেও কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি। এসব কাঁঠাল পাকা ও আধাপাকা অবস্থায় হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাহুবল উপজেলার মুছাই ও চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া বাজারে নিয়ে আসবেন বিক্রেতারা। পাইকাররা কাঁঠাল সংগ্রহ করে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন।
গত কয়েক বছর ধরে কিছু কাঁঠাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে বলে স্থানীয় আড়তদার, কৃষক ও কৃষিবিভাগ জানিয়েছে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- এ বছর গাছে গাছে কাঁঠালের প্রচুর মুচি এসেছে। মুছাই ফলের আড়তের মালিক সুমন চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী, সানু মিয়া চৌধুরীও এবছর কাঁঠালের ভালো ফলনের কথা জানিয়েছেন।
চুনারুঘাটের জাম্বুরাছড়ার পারুল মিয়া, নবীগঞ্জের দিনারপুরের সাজু মিয়া, বাহুবলের রশিদপুর পাহাড়ি এলাকার আমির উল্লা, নূরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, মর্তুজ আলী জানালেন- তাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে গাছে গাছে কাঁঠালের মুচি এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে আলাদা কোনো যত্ন নিতে হয়নি বলে উৎপাদন খরচও কম।
হবিগঞ্জ শহরের ক্রেতা বাবুল মিয়া জানালেন—নির্ভেজাল বিষমুক্ত কাঁঠাল কেনার জন্য প্রতি বছর মুছাই গিয়ে থাকেন। এবারও যাবেন।
এ ব্যাপারে জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্ব ভাদেশ্বর পুকুরপাড় গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে সাইদুল ইসলাম জানান—ফয়জাবাদ হিল্সের পাহাড়ি টিলায় তাদের কাঁঠাল বাগান রয়েছে। এখানে কাঁঠালের ফলনে কোনো খরচ নেই বললেই চলে। সঙ্গে লিচু, লেবু, আনারসও চাষ হচ্ছে। সাইদুল জানান—পাইকাররা গাছের মুচি কাঁঠাল ক্রয় করে রাখছেন। পরে পাকা অবস্থায় বিক্রিতে তারা বেশি মুনাফা পাবেন। আর অনেকে এই অবস্থায় বিক্রি করছেন অগ্রিম টাকা পেয়ে অন্য কাজ করার জন্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আকতারুজ্জামান বলেন—সরকারিভাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠাল ফলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে কাঁঠালের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায়, যা অন্যান্য ফলের তুলনায় লাভজনক। এছাড়া কাঁঠাল চাষে তেমন কোনো যত্মে’র প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যামুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত, কারণ এই গাছ দীর্ঘ সময় পানি সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকার মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে গাছে গাছে কাঁঠালের মুচি এসেছে। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে কাঁঠাল পাকা শুরু হবে।
প্রতিনিধি/একেবি