images

সারাদেশ / জাতীয়

আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি: দুদক চেয়ারম্যান

জেলা প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম

আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে রয়েছে। এই দুর্নীতি দূর করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তা না হলে আমাদের সন্তানদের জন্য একটি খারাপ পৃথিবী রেখে যেতে হবে—এটা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। এমন মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

রোববার (২০ এপ্রিল) নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানি শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বড় একটি সমস্যা হলো—আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না। কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি যদি আমাদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে, তখন আমরা খুশি হই, সন্তুষ্ট থাকি। আমরা যদি দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতে না শিখি, তাহলে এই সংকট সহজে কেটে যাবে না। তাই আপনারা উদ্যোগ নিন—দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলুন। দেখবেন, একসময় ভালো ফল আসবে।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি এমনও দেখেছি—বাবা একজন ভালো সূফি মানুষ, কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে। এমন হলে ভালো-মন্দ মিশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হবে, যেখানে কাকে রেখে কাকে বাদ দেবো, সেটাই বোঝা যাবে না। আমাদের কাজগুলো যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঠিকভাবে হয়, তাহলে তো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে না।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় নীলফামারীতে দুর্নীতির হার অনেক কম। যদি ঢাকার দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে সেখানে এর হার অনেক বেশি। যেখানে দুর্নীতির প্রকোপ কম, সেই জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আশা করি, একদিন আপনারাই ঘোষণা করবেন—নীলফামারী বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা। পুরোপুরি সম্ভব না হলেও, আমরা যেন সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি, সে সহযোগিতা আপনারা করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, আমরা তা করতে প্রস্তুত।

সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অনেক সময় আমাকে শোনা যায়—আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু আপনার অফিসেই তো দুর্নীতি হয়। এটা একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় নয়। আমিও এড়িয়ে যাই না। আপনারা আমাদের সেই জায়গাগুলো দেখিয়ে দিন, আমরা চেষ্টা করব সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ, যদি দুর্নীতি দমন কমিশনেই দুর্নীতি হয়, তাহলে অন্যদের কাছে বলার কিছু থাকে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার প্রধান মনে করেন—আমাদের কর্মপদ্ধতিতে একটি বড় দুর্বলতা হলো, আমরা বেশিরভাগ সময় ব্যয় করি পুরনো দুর্নীতি খুঁজে বের করার পেছনে। আমাদের মূল কাজ হওয়া উচিত—ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করা। কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়, আমরা সবাই জানি। তাহলে আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না কেন?

গণশুনানিতে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মোহাম্মদ আকবার আলী আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিনসহ দুদকের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক তালেবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

s-r

পরে নীলফামারী সদর উপজেলার সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩১টি দফতরের বিরুদ্ধে মোট ৮১টি অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অভিযোগগুলোর বিষয়ে জবাবদিহি করেন।

প্রতিনিধি/একেবি