images

সারাদেশ

কয়রায় রাস্তা খুঁড়ে উধাও ঠিকাদার, ধুলা-কাদা নিয়ে জনদুর্ভোগ 

জেলা প্রতিনিধি

১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫১ পিএম

খুলনার কয়রা উপজেলায় চলমান একটি সড়ক উন্নয়ন কাজ ফেলে রেখে পালিয়েছে ঠিকাদার। কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গ্রাজুয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে হায়াতখালি বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক৭৭৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। সড়ক খুঁড়ে ইটের খোয়া ফেলে কাজ ফেলে রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আর কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদারকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কটি ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা বিভাগীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়কের উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৪ টাকায় মেসার্স এস. আর. ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক খুঁড়ে নামমাত্র বালু ও নিম্নমানের খোয়া ফেলে কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় খোয়া সরে গিয়ে রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তে পানি জমে থাকে, আর শুকনো মৌসুমে ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে, এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সদরে যেতে হয়। আগে ইটের সলিং থাকলেও চলাচলে তেমন সমস্যা হতো না। এখন উন্নয়নের নামে রাস্তা খুঁড়ে রেখে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। বৃষ্টির সময় যে কত কষ্ট হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এখন শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ঠিকাদার পলাতক এবং এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। তাঁরা সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের প্রভাব খাটিয়ে এবং পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ঠিকাদার শুধুমাত্র বালুর কাজ করেই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারে আপত্তি তুললে তিনি হুমকি দিতেন এবং চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখাতেন।

মঠবাড়ি গ্রামের সড়কের পাশের বাসিন্দা মাস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষায় কাদা আর এখন ধুলার যন্ত্রণা—আমরা দিশেহারা। দ্রুত এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস. আর. ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ শহিদুল ইসলাম সোহেল (ওরফে পিল সোহেল)-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মো. দারুল হুদা জানান, ‘কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদপত্র ও ২৮ দিনের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। তাই কাজটি বাতিলের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছি।”

প্রতিনিধি/একেবি