জেলা প্রতিনিধি
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
বগুড়া শহরে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন ছিনতাইকারীদের নিক্ষেপ করা ইট পাটকেলের আঘাতে। আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ছোরা-চাকু বিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। অপরাধী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ছিনতাইয়ের প্রথম ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে জয়বাংলা হাট এলাকায়। দুর্বৃত্তরা বালু বোঝাই একটি ড্রাম ট্রাক থামিয়ে ধারাল অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে নিয়ে যায় শহরের ধাওয়া পাড়া এলাকায়। সেখানে বালু আনলোড করে চালককে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ট্রাক মালিকের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রাতে সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ট্রাক চালককে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা চালককে ছেড়ে দিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ ভোর রাতে যুবদলনেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় যাত্রীবেশী দু’জন ছিনতাইকারী ইব্রাহীম নামের চালককে ছুরিকাঘাত করে তার ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বনানী-মাটিডালী সড়কে বগুড়া পুলিশ লাইন্সের পাশে মেহেদী হাসান নামের এক যুবক মোটরসাইকেল থামিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। পেছন থেকে অপর একটি মোটরসাইকেলে আসা দুই যুবক মেহেদী হাসানকে ছুরিকাঘাত করে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। বুধবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পর্যটন মোটেলের অদূরে ছিনতাইকারীরা নিতেশ গাঙ্গুলী (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে নগদ আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। নিতেশ রেনজিট অ্যাগ্রো সায়েন্স লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিতেশ মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় একদল ছিনতাইকারী পথরোধ করে। এরপর রাম দা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়বে।
এদিকে বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বিশেষ করে বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে সাবগ্রাম থেকে জয়বাংলা হাট এলাকার মধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে মোটরসাইকেলযোগে ছিনতাইকারীরা তৎপর থাকে। গাবতলী উপজেলার চক কাতলী গ্রামের ফজলুল রহমান জানান, কয়েকদিন আগে দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে সাবগ্রামের অদূরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলযোগে এসে গতি রোধ করে তার ইজিবাইক থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। বগুড়া সদরের কর্নপুর গ্রামের বাসিন্দা আজমল হোসেন জানান, একই মহাসড়কে জয়বাংলা হাটের অদূরে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন সন্ধ্যা রাতে। ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসব ছিনতাইয়ের কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তবে বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, অপরাধীদের কোনো ছাড় নেই। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণে ছোরা-চাকু বিরোধী অভিযান শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ট্রাক ছিনতাই এবং পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস