images

সারাদেশ

কুমিল্লা নগরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ‘স্যার গ্রুপ’

জেলা প্রতিনিধি

০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৭ পিএম

কুমিল্লা নগরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে স্যার গ্রুপ। গুম, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, চুরি, মিথ্যা মামলায় মানুষকে ফাঁসানোসহ সব ধরনের অপরাধের মূল হোতা এই স্যার গ্রুপের সদস্যরা। 

সরেজমিনে পুরাতন চৌধুরীপাড়া, ডেলোনি বাড়ি কলোনি ও ইসলামপুর এলাকায় গেলে স্থানীয়রা স্যার গ্রুপের বিভিন্ন অপকর্মের কথা তুলে ধরেন।

পুরাতন চৌধুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা কুমিল্লা জজ কোর্ট আইনজীবী বাহাউদ্দিন বলেন, এই স্যার গ্রুপের গ্যাংরা খুব ভয়ানক। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। ওই গ্রুপের সদস্যরা কখনও দু’টি মোটরসাইকেলে করে ৪জন আবার কখনও তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন একসঙ্গে মহড়া দেয়। তাদের সবার মাথায় হেলমেট থাকে যেন ছিনতাই করতে গেলে তাদেরকে কেউ চিনতে না পারে। এ স্যার গ্রুপের সদস্যরা আমার একটি আইফোন ১৫ এবং নগদ ২৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। স্যার গ্রুপের সদস্যরা যে মোটরসাইকেলগুলো ব্যবহার করে এগুলোতে নাম্বার প্লেট থাকে না।

ওই এলাকার স্থানীয় চা দোকানদার রুহুল আমিন বলেন, স্যার গ্রুপের গ্যাংরা প্রতি মাসে চাঁদা নিয়ে যায়। এদের মোটরসাইকেল দিয়ে মহড়ার কারণে এলাকাবাসী সবসময় ভয় ও আতঙ্কে থাকে। এই গ্রুপটি এলাকায় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরি করেছে।

thumbnail_IMG-20250205-WA0071

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একজন স্কুল  শিক্ষিকা বলেন, এই স্যার গ্রুপের  চক্রটি পুরাতন চৌধুরী পাড়া, ডেলুনি বাড়ি কলোনি, ইসলামপুর এবং আদালতের আশপাশের এলাকায় সব রকমের অপরাধ করে থাকে। এরা স্থানীয় নয় এই এলাকায় কয়েকদিন পর পর বাসা পাল্টায়। অপরাধীরাা প্রতিনিয়ত আমাদের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি ইভটিজিংসহ যাবতীয় অপকর্মে করে থাকে। কিছুদিন আগে আমার বাসা থেকে দু’টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে যায়।

কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকার একজন ব্যবসায়ী আরিফ চৌধুরী বলেন, স্যার গ্রুপ  এলাকার ভেতরে বিভিন্ন অপরাধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে এলাকাটির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। এলাকায়  মাদক বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিয়মিত মাদক সেবন করে রাতের বেলায়। তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এ বিষয়ে থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্র বলেন, স্যার গ্রুপের সদস্যরা আমার থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে এলোপাতাড়ি ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আমি কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে। আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় ঘুম,হত্যার হুমকি ও আঘাত করার কারণে মামলা করি এবং চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির জন্য দ্রুত বিচার আইনে মামলা করি। তারা একজন আরেকজন সদস্যকে স্যার বলে সম্বোধন করে।

thumbnail_IMG-20250104-WA0015

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী জানন, আমাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ৪ লাখ টাকা নেয় স্যার গ্রুপ। পরে তারা আমার টাকা মেরে দেয় বিদেশ না পাঠিয়ে। আমি টাকা চাইলে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। আমি থানায় জিডি করেছি। তাদের ভয়ে আমি এলাকায় থাকি না।

জেলা গোয়েন্দা অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল্লাহ বলেন, আপনার মাধ্যমে আমরা চৌধুরীপাড়ার স্যার গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারলাম।  আমরা ওই এলাকাটিকে গোয়েন্দা নজরদারিতে  আনব। আমাদের ডিবির টিম এ স্যার গ্রুপে কারা আছে তাদেরকে খুঁজে বের করবে। স্থানীয়ভাবে আমরা ওই এলাকায় বিশেষভাবে কাজ করব।

আরও পড়ুন

গোবিন্দগঞ্জে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ, গ্রেফতার ১

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহিনুল ইসলাম জানান, স্যার গ্রুপের বিষয়টি আমরা শুনেছি। ওই এলাকায় আমরা বেশ কয়েকবার পুলিশের ফোর্স পাঠিয়েছি। তাদের দ্রুত মুভমেন্ট করার কারণে আমাদের শনাক্ত করতে একটু দেড়ি হচ্ছে। আমরা পুরাতন চৌধুরী পাড়া এলাকায় পুলিশের কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজির আহমেদ খাঁন বলেন, স্যার গ্রুপের কর্মকাণ্ডগুলো আপনার কাছ থেকে জানলাম। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলব।

প্রতিনিধি/এসএস