জেলা প্রতিনিধি
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪১ এএম
রাজবাড়ী জেলা সদরের রবাট ইউনিয়নের মতিয়াগাছিতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দিনব্যাপী গ্রামীণ নচির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে মেলায় সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমেছে। ছেলে বুড়ো সবাই মেতেছে আনন্দ উৎসবে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) শনিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়ন এবং গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মতিয়াগাছীর মাঠে এ মেলার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, জমিদার মঙ্গল বাগচি, তার ছোট ভাই হরিপদ বাগচি ও বুদু বাগচি তাদের জমিদারি আমলে শতবর্ষ আগে বাগচিবাড়ির মাঠে এ মেলার গোড়াপত্তন করেন। সেই জমিদাররা না থাকলেও আজও তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এলাকার মানুষ।
প্রতিবছর চৈত্রমাসে ১ দিনের জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
৭০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিদ্দিক আলী খান বলেন, ছোটবেলা থেকে এই মেলাটা দেখে আসছি। তখন বড় বড় সার্কাস দল মেলায় আসতো। এখন অবশ্য তা দেখা যায় না। তবে নাগরদোলা, চরকি, হরেক রকমের শতশত দোকানের পসরা আগের মতোই এ মেলায় বসে থাকে। নিজ এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা হতে বহু মানুষ এ মেলায় আসে। এলাকার মেয়েরা মেলা উপলক্ষে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসে। হাজার হাজার নারী- পুরুষ, শিশু ও বয়স্কদের পদচারণায় দিনভর মুখর থাকে মেলার মাঠ। মেলায় এসে কেনাকাটা করে, খাওয়া-দাওয়া করে এবং মেলার বিভিন্ন আয়োজন উপভোগ করে।
মেলার মাঠে আসা স্থানীয় সালাম সরদার বলেন, হিন্দু জমিদাররা এই মেলা চালু করেন। বহু বছর ধরে এ মেলা এ অঞ্চলের একটা সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়ে আছে।
মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী কাজী সোহাগ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় ঘুরতে এসেছি। অনেক আয়োজন এখানে। ঘুরে দেখে পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি। খুব ভালো লাগছে।
আরেক দর্শনার্থী টিটু শেখ বলেন, বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনেছি। এ মেলায় আশে পাশের জেলা থেকেও মানুষ আসে।
গোয়ালন্দ পৌর এলাকা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছে গৃহবধূ সামিয়া ফারহানা। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এই মেলায় আসি। ঘোরাঘুরি করি, কেনাকাটা করি, খাইদাই আনন্দ করি। খুব ভালো লাগে।
মিষ্টি মন্ডার দোকানি আলম শেখ বলেন, মেলায় আজ আমি বিভিন্ন ধরনের মিস্টি, জিলাপি, নিমকি, খুরমা, কটকটি, বাতাসা বিক্রি করছি। অনেক ক্রেতা আনন্দ করে খুশি মনে কিনছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শরীফ আল রাজিব জানান, মেলার আগত দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের জান মালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে ছিল পুলিশ। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন ছিল। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল পুরো মেলার মাঠ ও আশপাশের এলাকা। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী মেলা সম্পূর্ণ হয়েছে। রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সব সময় জেলাবাসীর কল্যাণে কাজ করে চলছে।
প্রতিনিধি/এসএস