জেলা প্রতিনিধি
১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:১২ পিএম
ক’দিন আগেই গাছের ঝুলন্ত টাটকা টমেটো দেখে প্রাণ জুড়িয়েছিল চাষিদের। মনে হয়েছিল, ভালো ফলনে সচ্ছলতা আসবে তাদের। কিন্তু সেই টমেটো এখন জমি থেকে তুলতে আগ্রহ নেই চাষিদের। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্টের ফসল টমেটো।
এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ এলাকার চাষিরা। জেলার শস্যা ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত এই এলাকায় সবজি সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো হিমাগার। এতে করে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের হওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। কারণ ফসল তোলার সঙ্গে সঙ্গেই বাধ্য হয়ে ‘পানির দরে’ বিক্রি করতে হচ্ছে, না হলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। রয়েছে এমন শঙ্কাও।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর, সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, জামিরকোনা, হোমেরজান, পাত্রখোলা, কাটাবিল, নাজাতকোনা, ধলাই পার, নরেন্দ্রপুর, আদমপুর ও ইসলামপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে কেউ কেউ বারো মাসও টমেটো চাষাবাদ করেন।
স্থানীয় চাষিরা বলছেন, বর্তমানে জমিতে অনেক ফসল রয়ে গেছে। তবে বাজারে দাম কমে গেছে। তাই টমেটো তোলার মজুরের মজুরি ও পরিবহণ ব্যয় না ওঠার কারণে জমিতেই কষ্টের ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান।
মাধবপুর এলাকার টমেটো চাষি সুফিয়ান আহমেদ বলেন, টমেটো তোলা, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়। এতে দেখা যায় বিক্রির চেয়ে খরচ বেশি, তাই আর জমিতে থাকা টমেটো তুলি না, জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সব।
আগে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা টমেটো নিতে জমিতে আসলেও এখন কোনো পাইকার আসছেন না জানিয়ে চাষি কামাল মিয়া বলেন, টমেটো বিক্রি করে যা পাব, তার চেয়ে খরচ অনেক বেশি। তাই টমেটো জমি থেকে তুলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। এখন জমিতেই টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সবজি চাষি সাইমুন বলেন, স্থানীয় ব্যাপারীর কমলগঞ্জ থেকে স্বল্প দামে চাষিদের ফসল কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ কথা রাখছেন না।
স্থানীয় আড়তদার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, গত একমাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮ থেকে ১০ টাকায়। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি করছি ৩ থেকে ৪ টাকায়। বাজারে টমেটোর দাম এতটাই কমে গেছে যার ফলে চাষিরা জমি থেকে টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের অনেকের জমিতে এখনও টমেটো রয়ে গেছে।
অন্যান্য সবজিও বাজারে থাকায় এবং এ বছর টমেটো উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষিরা দাম পাচ্ছে না জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, যারা আগাম টমেটো চাষ করেছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এছাড়া এখন যারা টমেটো লাগাবেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারাও ভালো দাম পাবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলায় হিমাগার স্থাপনের বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, উপজেলার কৃষকের কষ্টের ফসল সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হবে।
প্রতিনিধি/এসএস