জেলা প্রতিনিধি
১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:১৫ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। তারা সকালে কক্সবাজার পৌঁছে, দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সফরের প্রাথমিক সূচি সম্পর্কে জানিয়ে বলেন, সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাদের স্বাগত জানাবেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
এরপর, জাতিসংঘ মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছাবেন। এখানে তিনি একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আশ্রয়শিবিরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং গ্রহণ করবেন। ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি এবং আইওএমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন। বিশেষভাবে, খাদ্য সহায়তা সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনের শেষে, রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা, নারী ও তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, সন্ধ্যায় জাতিসংঘ মহাসচিব ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন হেলিপ্যাড এলাকায়, লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
রোহিঙ্গা নেতা ডা. জোবায়ের বলেন, ‘রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য রোহিঙ্গাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মি কৌশলগতভাবে নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করেছে। আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব এবং প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, কারণ এটি আমাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সফরে রোহিঙ্গাদের মর্যদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাংলাদেশিদের খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি এবং ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা উন্নতির বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে।’
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিবের এবং প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের দ্রুত এবং মর্যদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ।’
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয় শিবির কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, এরপর আরও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ৮ বছর পরেও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যার মধ্যে ১০ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন নিবন্ধিত। আশ্রিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে।
প্রতিনিধি/এইউ