বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
১৩ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এ শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অভিযুক্ত শিক্ষকের কোর্স মোবাইল জার্নালিজম (এমসিজে ৩০৮) সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল।
বুধবার (১২ মার্চ) প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান রাহাত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, একটি মেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়, ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি তাকে একাধিকবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর নাম লামিয়া আরজুমান্ড। ওই ব্যাচের কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ কোর্সের পরীক্ষা গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করা পিডিএফের মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায় ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৬টা ৪৭ মিনিটে। একই সঙ্গে ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে।
আইসিটি অ্যান্ড সোসাইটি পরীক্ষাটি গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ওই শিক্ষার্থীর কাছে থাকা পিডিএফ এর মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায় প্রশ্নের ৬ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত যে প্রশ্ন ছিলো তার হুবহু লিখা পিডিএফ এর ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২ মার্চ রাত ১১টা ৩ মিনিটে। যা লেনেভো নামে একটি ল্যাপটপ দিয়ে বানানো। জানা যায়, কাজী আনিছ যে ল্যাপটপটি ব্যবহার করছেন সেটিও লেনেভো ব্র্যান্ডের।
গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা এমসিজে ৩০৫ গুণগত গবেষণা পদ্ধতি কোর্সের ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের সঙ্গে ওই নারী শিক্ষার্থীর কাছে থাকা উত্তরপত্রগুলোর হুবহু মিল পাওয়া যায়। যার প্রমাণসহ একটি ডকুমেন্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে থাকা পিডিএফ ফাইলগুলোরও মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায়, সেগুলোও তৈরি করা হয়েছে লেনেভো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপটি দিয়ে।
প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরপত্রের হুবহু মিল থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইসিটি অ্যান্ড সোসাইটি কোর্সের শিক্ষক অমিত দত্ত বলেন, আমি প্রশ্ন করে সেই প্রশ্ন পরীক্ষা কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি। এখানে যদি অনৈতিক কিছু ঘটে থাকে তাহলে পরীক্ষা কমিটির সদস্যরাই সেটি ভালো বলতে পারবে।
ওই ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, প্রশ্ন যখন মডারেশন হয় তখন পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরাও থাকেন। এখানে প্রশ্ন ফাঁস হলে যে কারো কাছ থেকে হতে পারে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকও পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন।
ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, ১ম সেমিস্টার থেকেই কাজী আনিছের সহযোগিতায় এই ওই শিক্ষার্থী বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক কাজী আনিছের সঙ্গে সখ্যতার কারণেই ওই শিক্ষার্থী অভাবনীয় ফলাফল করে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছিলেন।
প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিত করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, আমি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় প্রশ্নের বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকি। নোটও দিয়ে থাকি। এটাকে কাজে লাগিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নরুল করিম চৌধুরী বলেন, আমার কাছে একটি উড়ো চিঠি এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করব।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে তিনি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বাহিরে থাকবেন। এছাড়াও এই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
প্রতিনিধি/টিবি