images

সারাদেশ

ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত সেই রিকশাচালকের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫২ পিএম

নরসিংদীর মাধবদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত রিকশাচালক আইনুদ্দিন (৪০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দীর্ঘ সাত মাস সাতদিন আহত থাকাকালীন সময়ে আইনুদ্দিন ঢাকা মেডিকেল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সবশেষ সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই নরসিংদীর মাধবদীতে পুলিশের গুলিতে আহত হয় রিকশাচালক আইনুদ্দিন। তার স্ত্রী-সন্তান বলতে কিছু ছিল না। নরসিংদীর মাধবদী পৌর শহরের বিরামপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সে গত ২৬ বছর ধরে রিকশা চালাতেন। নিহত আইনুদ্দিন দিনাজপুর জেলার পীরেরহাট বটতলী এলাকার বিলাত আলীর ছেলে।

নিহত আইনুদ্দিনের ছোট ভাই জয়নুদ্দিন জানান, আহত আইনুদ্দিনের মাথায় কয়েকটি গুলি লাগে। আহত হওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে সুস্থ হলে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে চলে যায় সে। সেখানে তার নিজের নামে থাকা চার শতাংশ জমি ছিল সেটা বিক্রি করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেন তিনি। জমি বিক্রির টাকায় ওষুধের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ চালাতেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তার চোখের আলো দিন দিন কমে আসছিল। মাঝেমধ্যে মাথার যন্ত্রণাটাও প্রকট আকার ধারণ করে। সেসময় পার্শ্ববর্তী বেডের রোগীর সঙ্গে থাকা একজন ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয় আহত আইনুদ্দিনকে।

পরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ঢাকায় এসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন। সেই থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

ছাত্রদের দল গঠনের আগেই সরে দাঁড়ালেন জোনায়েদ ও রাফে

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যায়। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

আইনুদ্দিনের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ছয় ভাই বোন। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা  ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়ে চলত আমাদের সংসার।  টানাটানির সংসারে ১৪-১৫ বছর বয়সেই জীবন জীবিকার এ মুহূর্তে আমার যতটা মনে পড়ে ২০০০ সালের আগেই নরসিংদীতে চলে যায় আইনুদ্দিন। সেখানে রিকশা চালিয়ে বাবা মার জন্য টাকা পাঠাতেন তিনি। অল্প বয়সেই তার আয়ের টাকায় একে একে তিন বোনের বিয়ের খরচ জোগান আইনুদ্দিন।

তিনি বলেন, সে যখন অসুস্থ হলো কেউ সাহায্য করতে পারিনি তাকে। নিজের জমি বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছে সে। বিগত আন্দোলনের আহতরা সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সহযোগিতা পেলেও আমার ভাই আইনুদ্দিনের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ।

এসময় নরসিংদী কিংবা মাধবদী থেকে বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী দীর্ঘ এই ৭ মাসের অধিক সময়ে রিকশাচালক আইনুদ্দিনকে দেখতে আসেনি কেউ বলেও জানান তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর হাসপাতাল থেকে আইনুদ্দিনের মরদেহ নিয়ে তার ভাইয়েরা দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ১০টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জগদল গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। পরে রাত ১১টায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

প্রতিনিধি/এসএস