images

সারাদেশ

হারিয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক ভাষা

জেলা প্রতিনিধি

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:০৮ পিএম

images

অঞ্চলভেদে বদলে যায় ভাষা। যদিও বাংলা ভাষার অন্যতম সম্পদ এই আঞ্চলিক ভাষার সৌন্দর্য। একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে নানান রূপে ব্যবহৃত হয়ে সমৃদ্ধি বাড়ায় ভাষার।

বাহের দেশ খ্যাত এই রংপুর তথা উত্তর অঞ্চল, এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে এই বাহে শব্দটি। কিন্তু কালের বিবর্তন, চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ

আঞ্চলিক ভাষাতেই রয়েছে স্পষ্ট শেকড়ের টান, যার সঙ্গে লেগে আছে মাটির গন্ধ, আঞ্চলিক ভাষা কী বোঝা এতটাই কঠিন? অঞ্চলভেদে হয়ত কিছুটা কঠিন, কিন্তু মায়ের কাছে শেখা এই ভাষাই তো শেকড়ের নির্যাস। আত্মার তৃপ্তি ।

এক কবি রংপুরের ভাষায় লেখা তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছে সে কথা - ‘ছোট থাকতে মাও শিখাইচে, হামার রংপুরিয়া আও, জীবন ভত্তুক এই ভাষাতে আও করিবার চাও। আজ- কাইল কার মানষি গুলার, বেজায় দ্যাকঙ ভাব, মাওয়ের ভাষাত আও না-করি, খোয়ায়; সোসাইটিতে খাব।’ হারিয়ে যাওয়া ভাষার কিংবা  এই আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার না করার কথা এই কবিতাতে প্রকাশ পেয়েছে। আরও তুলে ধরা হয়েছে যে সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ভুলে যাচ্ছি আঞ্চলিক ভাষাকে।

এ বিষয়ে নীলফামারী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমান প্রজন্মে আমরা যারাই রয়েছি না কেন, বাইরে লেখাপড়া করার জন্য অনেকের সঙ্গে মিশতে হয় - সেজন্য সবাই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ করে। তবে গ্রামে গেলে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে কথা বলা হয় আঞ্চলিক ভাষায়।

আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি আব্দুল মজিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ব্যবহার করে। তারা অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে। এ জন্য আমাদের এলাকার যে আঞ্চলিক একটি ভাষা বা কিছু রীতিনীতি রয়েছে, তা তারা ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্ম তো জানেই না যে আমাদের আঞ্চলিক একটি ভাষা রয়েছে। এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

নীলফামারী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মণিশংকর দাশগুপ্ত ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে কিংবা পৃথিবীর যেকোনো ভাষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা হচ্ছে প্রাণ স্বরূপ, আঞ্চলিক ভাষাই মূলত ভাষার প্রাণ। আমরা যে মান বাংলা বা শুদ্ধ বাংলা বলি, সেটিও আসলে একটা আঞ্চলিক ভাষা। আঞ্চলিক ভাষায় আমরা যদি পারস্পরিক ভাব বিনিময় করি, তাহলে হয়ত সে ভাষাকে কিছুটা টিকিয়ে রাখা যাবে। বন্ধু মহলের মধ্যে এখনও কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা একসঙ্গে হলে সে সময় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন।

প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা। সে ভাষাকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ও ভাব প্রকাশে তরুণদের হীনম্মন্যতা দূর করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি মহলগুলোর পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।

প্রতিনিধি/ এমইউ