images

সারাদেশ

হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে ভরপুর, রোগীর ভোগান্তি

উপজেলা প্রতিনিধি

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

হাতিয়া উপজেলা হাসপাতালে ওষুধে ভরপুর থাকলেও রোগীদের প্রয়োজন বা রোগের অবস্থাভেদে ওষুধ পাচ্ছেন না আগত রোগীরা। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো ওষুধ খুবই কম সময়ের ব্যবধান হওয়ায় মেয়াদ পেরিয়ে গেলে তা আর বণ্টন বা ব্যবহার হয়ে ওঠে না। ফলে অপ্রয়োজনীয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে। যেখানে বিনামূল্যে মানুষকে ওষুধসহ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরকারিভাবেই প্রদান করা হয়। যা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ক্রয় ও বিতরণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এর মাঝে যখন কোনো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় কর্তৃপক্ষ তখন তা বাছাই করে সিজার লিস্ট করে। এবং রেজিস্ট্রারে মেয়াদ উত্তীর্ণের কারণও লিপিবদ্ধ করার কথা।

thumbnail_IMG20250201125017

কিন্তু হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এখানে স্টোর রেজিস্ট্রার ইচ্ছে মাফিক তৈরি করা হয়। ওষুধ আসার পরিমাণ যেমন কাগজ আর বাস্তবতায় অমিল। তেমনি রোগীদের মাঝে বিতরণেও কাগজ কলমের সঙ্গে বাস্তবতায় অমিল থাকে। তাই ওষুধ সরকারের মূল্যবান সম্পদ হলেও তারা কাগজ কলম ঠিক রাখতে অতিরিক্ত ওষুধ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের আগে সরিয়ে রাখে। আবার রোগীদের মাঝে বণ্টনের করে অনিয়ম। ফলে সময়ে সময়ে সরকারের লাখ লাখ টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।

সাধারণ রোগীদের অভিযোগ ৫ টাকা দিয়ে বহির্বিভাগ থেকে টিকেট কেটেও এনসিডিসি কর্নারে নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছেন না। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ জন সাধারণ গরিব ও অসহায় রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তারমধ্যে ৪০-৬০ জন নন কমিনিকেবল ডিসিজ যা দীর্ঘমেয়াদি রোগ- হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত রোগী। ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ পুরোপুরি লিখলেও চিকিৎসা গ্রহণকারী সাধারণ মানুষ ওষুধ নেওয়ার জন্য গেলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তাদেরকে ২/৩টা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। একের অধিক ওষুধ চাইলে রোগীদের সঙ্গে অসৌজন্য ব্যবহারও করেন তিনি।

thumbnail_IMG20250202122135

এমনকিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন ‘ফৌজিয়া সাফদার সোহেলী’ নামের এক ফেইসবুক অ্যাক্টিভিসস্ট। যেখানে তামান্না সান্জুসহ কয়েকজনে এনসিডিসি কর্নার ইনচার্জ, স্টোর কিপার ও ফার্মাসিস্টকে দায়ী করে কমেন্ট করেন।

আরও পড়ুন

মেঘনা নদী ও স্থলভাগের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ডাকাত কানা জহির

বিভিন্ন অভিযোগের সূত্র ধরে রোববার ও সোমবার সরেজমিন গিয়ে যার প্রমাণও পাওয়া যায়। ওষুধ প্রদানে দায়িত্বরত ব্যক্তি উপজেলার সাগুরিয়া এলাকার আয়শা আক্তার নামের এক রোগীকে বলেন, এখন ওষুধ নাই, পরে আসিয়েন। কালাম নামের এক রোগীকে দুইটা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এবং বাকি ওষুধ নাই বলে বিদায় করে দেন। শূন্যেরচর ৮ নম্বর পৌর ওয়ার্ডের আয়েশা বেগমকেও সামান্য কয়টা ওষুধ দিয়ে রূঢ় আচরণ করে তাড়িয়ে দেন ওষুধ প্রদানকারী উক্ত ব্যক্তি।

thumbnail_IMG20250202122153

অথচ এনসিডিসি (নন কমিউনিকেবল ডিজিস কন্ট্রোল) কর্নারের ওষুধ এবং সিভিয়ার এ্যকুইট ম্যাল নিউট্রেশনে (স্যাম) ক্যাটাগরির অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ডিজি হেলথের দেওয়া এফ-৭৫ দুধ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আসায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় বলে দাবি করেন এনসিডিসি কর্নার ইনচার্জ মানছুরুল হক, স্টোরকিপার আকরাম ও ফার্মাসিস্ট ফিরোজ উদ্দিন।

তারা জানান, ওষুধগুলো লোকাল চাহিদা ব্যতিরেখে ডিজি থেকে তাদের মনমত উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়। ফলে যথাযথ ওষুধের স্থলে প্রয়োজনবিহীন বহু ওষুধে স্টোরভর্তি হয়ে যায়। তাহলে রোগীরা ওষুধ চাইলে সরবরাহ কম কিংবা নাই বলার কারণ সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি দায়িত্বরত এই ব্যক্তিরা। 

এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কো.লি. এর সিল ছাড়া অন্যান্য কোম্পানি থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের কেনা প্রায় ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। যদিও তা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন দায়িত্বশীল এই ব্যক্তিরা।

thumbnail_Messenger_creation_F863E0BF-C71F-421D-8B23-5F6BD5891431

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মানসী রানী সরকার বলেন, অভিযোগসমূহের ব্যাপারে আমি অবগত নয়, তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এনসিডিসি এবং স্যাম কর্নারের অতিরিক্ত ওষুধ প্রেরণের বিষয়ে সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঠাতে হবে, কোনো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হবে না। যেকোনো অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস