images

সারাদেশ

মেঘনা নদী ও স্থলভাগের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ডাকাত কানা জহির

জেলা প্রতিনিধি

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

images

মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীজুড়ে এখন আতঙ্কের নাম ১৫ মামলার আসামি নৌ-ডাকাত কানা জহির। বাল্কহেড থেকে বিট তোলার মধ্য দিয়ে উত্থান হলেও এখন নদী পথে প্রত্যেকটি অপকর্মের সঙ্গে কানা জহিরের নাম জড়িত। বিভিন্ন অপকর্ম ও হত্যা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে দু’ডজন মামলা থাকলেও তাকে গ্রেফতারে নেই পুলিশের কোনো তৎপরতা।

যার ফলে, নদী ও স্থলভাগে মূর্তিমান আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কানা জহির। এতে অতিষ্ঠ মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুরের মানুষ। মূলত বাবলা ডাকাতের মৃত্যুর পর আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে জহির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের মাহমদ মিয়ার ছেলে মো. জহির ইসলামের কথা। জন্ম থেকে তার ডান চোখ অন্ধ হওয়ায় সেখান থেকে তার নাম হয় কানা জহির। সবাই তাকে এ নামে চেনে।

thumbnail_VideoCapture_20250203-185451

গজারিয়া, বেলতলী, চর আব্দুল্লা ও মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশে চলে তার সব অপকর্ম। মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি ও মেঘনা নদীতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ সব ধরণের অপকর্ম পরিচালনা করে। জহির মেঘনা নদীর গজারিয়া, বকচর ও ষাটনল থেকে শুরু করে মোহনপুর পর্যন্ত ওই পথে চলাচলকারী বাল্কহেড থেকে পুলিশের নাম করে ‘বিট’ তোলে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইজারা নেওয়া বালু মহালের পাশে জোর করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। এ নিয়ে প্রতিদিন চলে নদীপথে গোলাগুলি।

আরও পড়ুন

কচুয়ায় পিকআপভ্যান চাপায় ডাকাত নিহত

মূলত তার ভয়ংকর রূপ চোখে পড়ে রাতের বেলা। জহির একা নয়, তার একটি বাহিনী রয়েছে। জহির ও তার ছোট ভাই এবং বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা নদীপথে সব ধরনের অপকর্ম পরিচালনা করে। পুলিশের অভিযান ও নজরদারির অভাবে রাতের বেলা মাদক, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, চলন্ত নৌযানে ডাকাতি করে। এছাড়া বিভিন্ন চরে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা রকমের অন্যায়-অত্যাচার চালায় তারা।

মুন্সিগঞ্জের কালিরচর থেকে শুরু করে কালিপুর-ষাটনল, নাসিরাচর হয়ে মোহনপুর পর্যন্ত ডাকাতি এবং মাদক সরবরাহ করে কানা জহিরের সিন্ডিকেট। জহিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে তার আপন ভাই কুখ্যাত আঙুল কাটা শাহিন। সশস্ত্র শাহিন ও জহির ডাকাত দিনের বেলা অবস্থান করে কালিরচর আশপাশের কয়েকটি চরে। বকচর থেকে কালিরচর পর্যন্ত শাহিনের ও কালিরচর থেকে নাসিরাচর ও মোহনপুর জহির তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে।

thumbnail_VideoCapture_20250203-185511

জানা গেছে গত ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে জলদস্যু কানা জহির চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় তার দলবল দিয়ে ডাকাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোপন সংবাদে খবর পেয়ে চাঁদপুরের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযান চালায় ওই এলাকায়। এসময় ডাকাত জহিরের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে কানা জহির পুলিশের আক্রমণে টিকতে না পেরে অস্ত্র, স্পিডবোট এবং গোলা বারুদ রেখে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পলায়ন করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কানা জহিরের ব্যবহৃত স্পিডবোট, কাটা বন্দুক, দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পরের দিন সকালে ডাকাত কানা জহির তার দলবল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে জনৈক এক ব্যবসায়ীর স্পিডবোট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বিষয়টি অবগত করার পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর স্পিডবোট উদ্ধার করতে পারেনি।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ২১ ডিসেম্বর সকালে বকচর এলাকায় ইজারাকৃত বালু মহলে এসে চাঁদা দাবি করে কানা জহির। মাটি কাটার ড্রেজারে থাকা লোকজন কানা জহিরকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে নদীতে থাকা তিনটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

আন্দোলনে ছাত্র হত্যার আসামি ধামরাই যুবলীগ নেতা মোহনগঞ্জ থেকে গ্রেফতার

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কানা জহির এক সময় বাবলা ডাকাত ও পুলিশের জন্য কাজ করত। কিন্তু পরবর্তীতে জহির ও তার ভাই শাহিন নিজেরাই তৈরি করেন একটি সশস্ত্র আন্তঃজেলা ডাকাত দল। তারা চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ। জহিরসহ একাধিক বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ার সুযোগে ওইসব এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, অস্ত্র ঠেকিয়ে রাতের বেলা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জহির ও তার বাহিনী। কেউ তাদের বাঁধা দিলে তাদেরকে গুলি করে স্পিডবোট দিয়ে স্থলভাগে নিরাপদে চলে আসে। প্রত্যেকদিন নদীপথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইজারাকৃত বালু মহালের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের ড্রেজার।

thumbnail_VideoCapture_20250203-185545

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাদের অত্যাচারে আমার অতিষ্ঠ। তার অপকর্মের বিষয়ে কেউ বাঁধা দিলে তাদেরকে হুমি দেয়। আমাকে পুলিশে গ্রেফতার করলে ১৬৪ ধারায় তোদের নাম বলে দেব। এতে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হয় না। আরও বলেন, এইত কয়েক মাস আগে টঙ্গীবাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, কানা জহির একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার। তার বিরুদ্ধে গজারিয়া, ষাটনল, মতলব উত্তর, চাঁদপুর ও লৌহজংয়ে ১৫টি মামলা রয়েছে। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ার তাকে গ্রেফতার করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা যেকোনো উপায়ে তাকে গ্রেফতার করব।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর ও সিরাজদিখান সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, কানা জহিরকে গ্রেফতারে আমরা সব সময় সোচ্চার। কয়েকদিন আগেও ডিবি পুরিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। জহির নদী পথে থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারিনি। তবে তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছি।

thumbnail_IMG-20250131-WA0011

শুধু পুলিশ নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হলে চরাঞ্চল থেকে অপরাধীদের নির্মূল এবং অসংখ্য অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।

মেঘনার নৌ-ডাকাত কানা জহির ও মেঘনায় অবৈধ ড্রেজিংয়ের ছবিটি শুক্রবার সকালে তোলা- ঢাকা মেইল।

প্রতিনিধি/এসএস