বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) অন্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে বিষয়টি জানান। পরে তাকে প্রক্টর দফতরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওই তরুণের নাম নাভিক রহমান। তিনি ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন এত দিন। জিজ্ঞাসাবাদে নাভিক রহমান দাবি করেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করে আসছিলেন।
নাভিক রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবিও রয়েছে। এ ছাড়া আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। তার ফ্রেন্ডলিস্টে আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অনেকে যুক্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, নাভিকের বিষয়ে ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন তার পরিচয় বের হয়ে আসে। এমনকি নাভিক গার্ডিয়ান হিসেবে যাদের ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে নাভিক ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মতো। সে কোনো গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কি না, তদন্ত করা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সতর্ক থাকা দরকার আমাদের বিভাগের সিকিউরিটি নিয়ে। একজন ৪ মাস ধরে ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইডেন্টিফাই করতে পারেনি, এটা চরম ব্যর্থতা।
ইমতিয়াজ নাহিদ নামের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ওই ব্যাচে এর আগেও একজন ফ্রড ধরা পড়েছিল। তার নাম ছিল আনিকা। সবাই মিলে তাকে ধরার চেষ্টা করলে পালিয়ে যায় মেয়েটি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাস রোল কল করা হতো না। ওই সময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করত নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, তার (নাভিক) নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, ওই তরুণকে রাতে আটক করা হয়। আমি স্বশরীরে তখন উপস্থিত হতে পারিনি। প্রক্টর স্যারের সঙ্গে অল্প কথা হয়েছিল। বিস্তারিত কথা বলার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। এটুকু জেনেছি, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই নয়। তাই সে আদৌ ক্লাস করেছে কি না, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই ভালো বলতে পারবে।
রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।
এ বিষয়ে জানতে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেকের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রতিনিধি/এসএস