জেলা প্রতিনিধি
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
শীত আসতেই জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট। এটিই দেশের বৃহত্তম খেজুর গুড়ের হাট হিসেবে পরিচিত। শীত মৌসুমে শতাব্দী-প্রাচীন এ হাট নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার বসে এ হাট। খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে তৈরি গুড়ের ভাঁড় নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক এবং ব্যাপারীরা হাজির হন এখানে।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন এই হাটে খেজুর গুড় কিনতে। এ হাটের গুড় শুধু দেশেই নয়, সুনাম অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। প্রতি বছর এই হাটকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।
চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জেলায় প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এ বছর এই গাছগুলো থেকে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রতি বছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমছে।
সরোজগঞ্জের এ ঐতিহ্যবাহী হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। গুড়ের উচ্চমান এবং স্বাদের কারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত গুড়।
গুড় উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমনির্ভর প্রক্রিয়া। স্থানীয় গাছি দেলোয়ার হোসেন জানান, গাছ কাটা, রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরিতে অনেক কষ্ট হয়। তবে যে লাভ হয়, তা পরিশ্রমের তুলনায় খুবই কম।
এদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় গুড়ে চিনি মিশ্রণসহ বিভিন্ন ভেজাল করে বাজারে ছাড়ছে। ফলে সরোজগঞ্জ হাটের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
পাবনার গুড় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি এই হাট থেকে গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। তবে আগের মতো মানসম্পন্ন গুড় এখন আর পাওয়া যায় না। যদি মান নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তবে এ হাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।
এই বছর গুড়ের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। বর্তমানে ১০-১২ কেজি ওজনের এক ভাঁড় গুড় দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশের জেলা ঝিনাইদহ থেকে আসা ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, আমি পরিচিত চাষিদের কাছ থেকে চিনিমুক্ত গুড় কিনি। এ ধরনের গুড়ের চাহিদা বেশি এবং ভালো দামেও বিক্রি করা যায়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাটকে দেশের সর্ববৃহৎ গুড়ের হাট বলা হয়। এখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত গুড় সহজেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন। হাটে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার গুড় সুস্বাদু এবং চিনিমুক্ত হওয়ার কারণে সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন।
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট শুধু একটি বাজার নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়াতে এবং গুড় উৎপাদনের মান নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
এ হাটের ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতনতা এবং উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সঠিকভাবে মান বজায় রাখা যায়, তাহলে সরোজগঞ্জের গুড়ের হাট দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
প্রতিনিধি/ এমইউ