জেলা প্রতিনিধি
০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০২ এএম
শহরজুড়ে অপরিকল্পিত ময়লার ভাগাড় আর পচা গন্ধ। এমন চিত্র কয়েক যুগের। পরিস্থিতি পরিবর্তনে নওগাঁয় আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজ শুরু হয় ৬ বছর আগে। কাগজে-কলমে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিলে মাসে। তবে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক এই বর্জ্য পরিশোধনাগারটি। ফলে এর সুফল না পাওযায় সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের প্রকল্পটির অবস্থান নওগাঁর পৌরসভার কোমাইগাড়ী এলাকায় ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পাশে। প্রকল্প অবকাঠামো নির্মাণের আগেও ওই স্থানেই শহরের বাসাবাড়ির সব গৃহস্থালি বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা ফেলা হতো। বর্তমানে প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় ল্যান্ডফিলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে এখনও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, আশপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি দুই বছরেও চালু করা যায়নি। প্রকল্পটির ডিজাইনে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কোনো পদ্ধতি বা যান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় এখনও বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়নি। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু করা না যাওয়ায় ইতোমধ্যে স্থাপন করা মেশিন সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করে নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দরপত্র বাছাই শেষে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে কাজটি বুঝিয়ে দেয় ওই বছরের আগস্ট মাসে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু করতে পারেনি পৌর র্কর্তৃপক্ষ।
স্থাপিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ল্যান্ডফিলের পাশে একটি উন্মুক্ত স্থানে শহরের বাসা-বাড়ি থেকে নিয়ে আসা গৃহস্থালি বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। ল্যান্ডফিলের ডাম্পিং এলাকাতেও কিছু ময়লা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং এলাকায় ফেলা ময়লা থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক।
শহরের কোমাইগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে শুনে আসছি সরকারি প্রকল্প হয়েছে। এখানে খোলা জায়গায় আর ময়লা ফেলা হবে না। কিন্তু শুধু শুনেই আসছি এটা। পৌরসভার ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন এখানে এনে ফেলা হয়। তাহলে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এমন ল্যান্ডফিল কেন করা হলো তা বোধগম্য নয়। অযথা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করে এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী পৌর কর্তৃপক্ষ।
আরেক বাসিন্দা সোবহান হোসেন বলেন, পরিশোধনাগারটির পাশে এখনও উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ময়লা ফেলার জায়গার আধা কিলোমিটার এলাকায় গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। নাক ঢেকে যেতে হয়। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষণ হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। এখানে বসবাস করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে দ্রুত এই প্রকল্পটি চালু করা।
নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ধরনের প্রকল্পের কারিগরি বিষয়ে ও প্রকল্পের ডিজাইন সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা ছিল না। প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ডিজাইনে ত্রুটির বিষয়টি আমাদের কাছে ধরা পড়ে। এই প্রকল্পে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার যান্ত্রিক কোনো পদ্ধতি নেই। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে গেলে নতুন অবকাঠামো দরকার। সেটা করার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস