images

সারাদেশ

ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, দুর্ভোগে পথচারীরা

জেলা প্রতিনিধি

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

রাজশাহী নগরীতে ফুটপাত দখলে নিয়ে বসেছে হাজার হাজার অস্থায়ী দোকানপাট। এমনকি নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় সড়ক বন্ধ করে দিয়ে দোকানপাট বসানো হয়েছে। এতে নগরীর সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি যানজট তৈরিসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে দখলমুক্ত করা হচ্ছে না এসব ফুটপাত ও সড়ক।

footpat_4

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ভেতরে বিভিন্ন রাস্তার পাশে টাইলস দিয়ে ফুটপাত বাঁধানো হয়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে এসব টাইলস বসানো হয়। বর্তমানে তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কটি ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশ ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফুটপাত দখল শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, সোনাদীঘির মোড়, মণিচত্বর, রেলগেট, নিউমার্কেট, অলোকার মোড়, রাণীবাজার, বাটার মোড়, লক্ষ্মীপুর, ভদ্রা, তালাইমারী, ঘোষপাড়া, উপশহর নিউ মার্কেট, সাগরপাড়া বৌ বাজার, শালবাগান বাজার, রেল স্টেশন, পুরাতন ঢাকা বাসটার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টেই বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে পরিচালিত হচ্ছে ব্যবসা। ফাস্টফুড, চায়ের দোকান ও কাপড়ের দোকান রয়েছে সবচেয়ে বেশি।

footpat_2

সবচেয়ে বেশি দুভোর্গ তৈরি হয়েছে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায়। সড়কে দোকানপাট বসিয়ে দুর্ভোগের বাড়তি মাত্রা সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে অবৈধ দোকানপাটের ফলে প্রেসক্লাব ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অফিসের প্রবেশের পথই বন্ধ হয়ে গেছে। জায়গা নেই মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের। ব্যবসায়ী বলছেন, তারা চাঁদা দিয়ে বৈধভাবে এসব দোকানপাট বসিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়মিত চাঁদা নিতেন।

গণকপাড়া এলাকায় ফুটপাতের ওপর দোকান বসিয়ে ৬-৭ বছর ধরে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করে আসছেন রেজাউল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা টেবিল ভাগাভাগি করে চাঁদা নিয়ে এসব দোকান বসিয়ে গেছে। দোকানপ্রতি মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নিত তারা। এখনও ফোনে আমার কাছে আওয়ামী লীগের এক নেতা চাঁদা চেয়েছেন। ওর বাসা এখানেই। আমি বলেছি, চাঁদা দিতে পারব না।

footpat_5

ফুটপাতের ওপর দোকান প্রসঙ্গে রেজাউল বলেন, সবাই তো মার্কেটে গিয়ে কিনতে পারে না। গরিব মানুষেরা আমাদের কাছে আসে, কম দামে হাতের কাছে জিনিসপত্র পায়। গরিব মানুষের জন্য ফুটপাত যথেষ্ট। পাশেই সড়কের ওপর দোকান বসিয়েছেন রনি নামে আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নাই, পুলিশ আমাদেরকে বসিয়ে দিয়ে গেছে।

footpat_7

সাহেব বাজার এলাকায় অবৈধভাবে দোকান দিয়েছেন নাইম, সায়েম, কায়েম। তিন ভাই মিলে তিনটি দোকান চালাচ্ছেন ১৮ বছর ধরে। কায়েম ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে তো চাঁদা দিতাম। তাই ব্যবসা করতে অসুবিধা হয়নি। দিনে ৪০০-৫০০ যার কাছে যে রকম পেত, আওয়ামী লীগের লোকজন চাঁদা নিত। এখন চাঁদা লাগছে না। এখানে দোকানের বিষয়ে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। কম দামে সবকিছু আমাদের কাছে পান।

তবে ফুটপাত দখলে থাকায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। পথচারী, স্থায়ী দোকানি এবং পরিবহণ শ্রমিকসহ সর্বসাধারণ ক্ষুব্ধ। গণকপাড়া এলাকায় কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। আব্দুল আওয়াল নামে এক রিকশাচালক ঢাকা মেইলকে বলেন, রাস্তা বন্ধ করে আমাদের ক্ষতি করে দিয়েছে। লোকজন পাচ্ছি না। কঠিন দুর্ভোগ হচ্ছে। যা কিছু হয়, শুধু অটোওয়ালার ওপর চাপ। আমার নাকি যানজট করি। তো এখানে কাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে, আপনারাই তো দেখতে পাচ্ছেন।

footpat_8

নগরীর বালিয়াপুকুর এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা পেশায় ট্রাকচালক। বর্তমানে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, দেড় মাস থেকে রিকশা চালাচ্ছি আমি। গণকপাড়ায় এসে জিরো পয়েন্টে আর ঢুকতে পারি না। রাস্তায় দোকান বসিয়ে দিয়েছে। লোকগুলো কোথায় নামাব?

আল মদিনা তুলা ঘরের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন আকাশ ঢাকা মেইলকে বলেন, এভাবে খুব গ্যাঞ্জাম হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা নাই। আমাদের দোকানের সামনে এভাবে দোকান বসিয়ে দিয়েছে, লোকজন আসতে ডিস্টার্ব মনে করছে। লোকসানে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ৭-৮ লাখ টাকা অ্যাডভান্স (সিকিউরিটি) দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছে। প্রতিমাসে ১৫-২০ হাজার টাকা শুধু দোকানভাড়া লাগে, আমাদের বেচাকেনা হচ্ছে না। ওরা ফুটপাতে এসে আমাদের ব্যবসা আরও নষ্ট করে দিয়েছে।

লামিয়া নামে রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, কলেজ থেকে বের হয়ে হাঁটার জো নেই। রাস্তার দু’পাশে দখল করে দোকানপাট বসেছে। আমাদের খুব সমস্যা হয়। রায়হান নামে এক এনজিওকর্মীর বলেন, শহরে এরকম অবস্থার কারণে বের হতে ইচ্ছে করে না। আমরা কাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।

এদিকে, নগরীর কয়েকটি ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নগরীর সিটিহাট থেকে তেরখাদিয়া এলাকা পর্যন্ত ফুটপাতের প্রায় ৫৭৫টি স্ল্যাবের মধ্যে সাড়ে চারশো স্ল্যাব চুরি হয়েছে। এতে ফুটপাত দিয়ে চলাচলও চরম অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। চুরি করা হয়েছে মাটির নীচ দিয়ে সংযোগ থাকা বিদ্যুৎ তারও।

শৃঙ্খলা ফেরাতে ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী প্রেসক্লাব নেতারা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারের কাছে দ্রুত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তবে এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া রাসিক থেকেও নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

এ ব্যাপারে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরিফ উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সিএন্ডবি এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। নিয়মিত আমাদের অভিযান চলছে। কিন্তু মুশকিল হয়ে গেছে, উচ্ছেদ হওয়ার পর তারা নিজেরা বা কারও ইন্ধনে আবারও দোকান বসাচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে। প্রেসক্লাবের সড়ক ও ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রশাসক আসলে বিষয়টি তার নজরে নিয়ে আসবো।

এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ফুটপাত নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। যে-সব জায়গায় জনসাধারণের পায়ে হেঁটে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, সেসব জায়গায় অভিযান চলমান থাকবে। সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নলেজে আছে। বিষয়টি আমরা দেখবো।

প্রতিনিধি/ এজে