জেলা প্রতিনিধি
০১ জুন ২০২২, ০৯:৪৭ এএম
কক্সবাজার সৈকতের অন্যতম সৌর্দয্য লাল কাঁকড়া। সৈকতে যখন লাল কাঁকড়ার দল ছুটোছুটি করে, তখন দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন পুরো সৈকতে লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অধিকাংশই লাল কাঁকড়াতে বিমোহিত হন। অনেকেই শুধু এক ঝলক টকটকে লাল এই কাঁকড়া দেখতে ছুটে আসেন সমুদ্রে। কিন্তু পর্যটকদের সেই বুকভরা আশা নিমিষেই বুকফাটা কষ্টে পরিণত হয়। কারণ পুরো সৈকত ঘুরে কাঁকড়ার দেখা পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।
কিন্তু এক সময় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলতো। সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী (সায়মন বিচ) পয়েন্ট ছাড়াও সৈকতের নানা স্থানে টকটকে লাল কাঁকড়া দেখা যেতো। বর্তমানে সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়া দেখা যায় না বললে চলে। তবে মাঝে মধ্যে টেকনাফ, ইনানী ও হিমছড়ি সৈকতের কিছু জায়গায় লাল কাঁকড়ার দেখা মিলে।
করোনাকালে যখন সমুদ্র সৈকতে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখন লাল কাঁকড়া দেখা গিয়েছিল সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। নিষেধাজ্ঞা শেষে লাখ লাখ মানুষের পদচারণায় আবারও হারিয়ে গেছে লাল কাঁকড়া।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলে কারেন্টজাল বসিয়ে ধ্বংস করছে লাল কাঁকড়া। অসাধু জেলে ছাড়াও সম্প্রতি পরিবেশ বিরোধী কিছু ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে সৈকতে ঘোড়া ও বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচলে লাল কাঁকড়ার আবাসস্থল বিনষ্ট করছে। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সুন্দর টকটকে লাল কাঁকড়া। এতে করে সৈকতের সৌন্দর্য্যে বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। প্রাকৃতিক এই জীব বিলুপ্ত হওয়ায় বিমুখ হয়ে পড়েছে পরিবেশবাদী পর্যটকদের অনেকেই।
সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজারে আমার আসা-যাওয়া ২০ বছরেরও বেশি। ছাত্রজীবনে কক্সবাজার খুব বেশি আসতাম। আসার কারণ হলো, সমুদ্রে গোসল করা, মুক্ত হাওয়া উপভোগ ও লাল কাঁকড়া দেখা। তখন সমুদ্রে নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলতো। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হতো, বালুচরজুড়ে যেন রক্ত লাল কৃষ্ণচূড়া ছেয়ে গেছে। এখন সেই কাঁকড়া পাওয়া আর দেখা ভাগ্যের ব্যাপার।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়া রক্ষায় বিচ বাইক ও ঘোড়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকল যানবাহন চলাচলে আইন চালু করতে হবে। পাশাপাশি এই প্রাণীদের চারণ ভূমি চিহ্নিত করে সেখানে মুক্ত চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ করতে হবে সাগরে কারেন্টজাল বসানো।
বাপা কক্সবাজার শাখার সভাপতি আরও জানান, সৈকতে চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে লাল কাঁকড়া। কিন্তু সমুদ্র সৈকতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ প্রাণীগুলো। তাদের রক্ষা ও অতীতের ন্যায় সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, সৈকতে লাল কাঁকড় বা রাজ কাঁকড়া বিলুপ্ত প্রায়। লাল কাঁকড়া রক্ষায় কারেন্টজাল বসানো থেকে বিরত থাকতে জেলেদের বহুবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা এই নিষেধাজ্ঞা তারা মানে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, যেসব অবৈধ যানবাহন বিচে চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইতোমধ্যে অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও যারা নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে সৈকতের পরিবেশ নোংরা করছে তাদের প্রতিহত করা হবে। লাল কাঁকড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিবি