২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
কুমিল্লার রুপসাগর। একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জায়গা, যা দিন দিন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের নাজিরাবাজার এলাকায় অবস্থিত এই দর্শনীয় স্থানটি, এর অপরূপ দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ এবং নিরাপদ পরিবেশের কারণে সব বয়সী মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশাল দিঘী, ফুলের বাগান, সুপরিকল্পিত বেঞ্চ, এবং জাহাজের আদলে তৈরি রেস্টুরেন্ট—সবকিছু মিলিয়ে রুপসাগর এক বিরল পর্যটন গন্তব্য। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই স্থানে পর্যটকরা নিরাপদে উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির রূপ, বিশ্রামের স্থান, এবং বিভিন্ন আধুনিক সুবিধা। রুপসাগরের সৌন্দর্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে এটি এখন কুমিল্লার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
কুমিল্লার রুপসাগর একটি শান্তিপূর্ণ ও মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠেছে। এটি কুমিল্লা সেনানিবাসের মধ্যে অবস্থিত এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, যা এই জায়গাটিকে একটি নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রুপসাগরের বিশাল দিঘী, ছোট টিলার উপরে বসার বেঞ্চ, নানা রকম ফুলের বাগান এবং পাখির কিচিরমিচির শব্দ—সব কিছু মিলিয়ে এই জায়গাটি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

যত্নসহকারে উন্নয়ন প্রকল্প
রুপসাগরের উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৪ সালে শুরু হয়। কুমিল্লা সেনানিবাসের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে ‘রুপসাগর দিঘী উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সাইকেল ট্র্যাক, ওয়াকওয়ে, জাহাজের আদলে ক্যাফেটেরিয়া, বোট ক্লাব, মিউজিক্যাল ফাউন্টেইন, শিশু পার্ক, ওয়াটারপার্ক, পিকনিক স্পট, মনোরেলসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া দিঘির মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী মৃনাল হকের একটি বৃহৎ ভাস্কর্য ‘আ’দিয়াত’, যা মুক্ত চিন্তা ও গতির প্রতীক।
পর্যটকদের জন্য উন্নত সুবিধা
এই প্রকল্পের আওতায় রুপসাগরের চারপাশে পরিকল্পিত বাগান, বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ এবং বসার জন্য বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে পর্যটকদের জন্য সুপরিকল্পিত রেস্টুরেন্ট, ওয়াশরুম এবং টিকেট ব্যবস্থাও রয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা, এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য ২৫ টাকা। এর পাশাপাশি ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানও খুবই ভালো এবং সাশ্রয়ী মূল্য রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও পর্যটকদের অভিজ্ঞতা
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে আসা মো. সোহেল বলেন, ‘আমি আমার বন্ধুরা সহ এখানে ঘুরতে এসেছি। জায়গাটি খুবই মনোমুগ্ধকর। এত বড় এলাকাতে এত সুন্দর জায়গা আজকাল দেখা যায় না।’ ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সুমাইয়া আহসান মনিকা ও রহিমা আক্তার ইতি জানান, ‘কুমিল্লায় যে এত সুন্দর জায়গা আছে, তা আমরা জানতাম না। গাছগাছালি, ঘেরা নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। আমরা ঢাকা থেকে এসেছি, সবাই একমত যে এটি সুপার জায়গা। এখানে আসলে মন ভালো হয়ে যায়।’

রুপসাগর কুমিল্লার একটি অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত অবকাঠামো এবং নিরাপত্তার সঙ্গে এটি এখন কুমিল্লার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। যদি আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে রুপসাগর আপনার জন্য এক অসাধারণ স্থান হতে পারে।
প্রতিনিধি/একেবি