images

সারাদেশ

দুই স্বামী, এক স্ত্রী: রাজবাড়ীর রহস্যময় সংসার কাহিনি

জেলা প্রতিনিধি

২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ পিএম

রাজবাড়ী জেলার একটি গ্রামে ঘটেছে এমন এক ঘটনা, যা সবার মনে প্রশ্ন তুলেছে। এক নারী দুই স্বামীকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন সংসার করেছেন।

একদিকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন, অন্যদিকে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে গোপনে সম্পর্ক। প্রায় দুই বছর ধরে এই রহস্যময় সংসার চলে আসার পর, অবশেষে বিষয়টি প্রকাশ পেলে এলাকাতে তোলপাড় শুরু হয়। এখন এই অস্বাভাবিক সংসারের কাহিনী আদালত ও ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছেছে, যেখানে প্রথম স্বামী প্রতারণার অভিযোগ করেছেন এবং দ্বিতীয় স্বামীও পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন বিভ্রান্ত।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ এবং আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এই দম্পতির।

হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল। তবে দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে যাওয়া হয়নি তার, সংসার করতে বাবার বাড়িতেই।

প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল। স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসাথে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, ‘জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মধ্যে আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই। কাজ থেকে ফিরে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি তাকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি, ওই ছেলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বর বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি। দুই দিন পর জানতে পারি, জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। এরপর জান্নাতুল আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি এবং ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর আমলি আদালতে মামলা করেছি। জান্নাতুল আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আইন ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অপরাধ।’

এদিকে, জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি। তবে তিনি দাবি করেছেন, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। তবে সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা জানান, ‘কোনো এক সূত্রে জান্নাতুলদের বাড়িতে গিয়ে আমার তাকে পছন্দ হয়। পরে আমি তার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ঠিক হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে জানায়, জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সাগর ছবিও পাঠায়, তবে আমি পরে জানতে পারি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’

জান্নাতুলের মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। তবে দু’মাস পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাগর আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের কপি আসার কথা ছিল, তবে তা কখনো পাইনি। সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে জান্নাতুলের বাবা ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে সাগরের সঙ্গে সংসার করবে না।’

এটি এমন ঘটনা, যা সমাজে ছেলেদের নির্যাতনের এক নতুন দিক তুলে ধরেছে, যা নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে।

প্রতিনিধি/একেবি